মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

অনুবাদ কবিতা : ঊর্মিলা চক্রবর্তী

 


ল্যাংস্টন
 হিউয়েস


হার্লেম    (Harlem)

 

ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখলে কি হয় স্বপ্নের?

 

সে কী শুকিয়ে যায়

রোদে দেওয়া কিশমিশের মতো?

অথবা ক্ষতর মতো পচে ওঠে

আর পূঁজ গড়াতে থাকে?

দুর্গন্ধ ছড়ায় পচা মাংসের মতো?

না কী রসের মিষ্টির মতো

তার উপরে শক্ত হয়ে জমে ওঠে চিনি?

 

হয়তোবা সে কেবলই এলিয়ে যায়

ভারি বোঝার মতো।

 

অথবা, সে কি ফেটে পড়ে বিস্ফোরণে?

    


লুসিন্ডার জন্য প্রেমগীতি    (Love Song for Lucinda)

  

প্রেম

একটা পাকা কুল

বেগুনী গাছে বড় হয়ে ওঠা।

একবার যদি তার স্বাদ নাও

তার মোহজালের যাদু

আর কখনও তোমাকে ছেড়ে দেবে না।

 

প্রেম

এক উজ্জ্বল তারা

সুদূর দক্ষিণ আকাশে দীপ্যমান

তেমনভাবে চেয়ে থাকো

আর তার জ্বলন্ত শিখা

তোমার চোখকে আঘাত করবে সর্বদা

 

প্রেম

এক সুউচ্চ পর্বত

বাত্যাসংকুল আকাশে মাথা তুলে

তুমি যদি

কখনও শ্বাসরুদ্ধ না হতে চাও

বেশি উঁচুতে উঠো না।



​[ল্যাংস্টন হিউয়েস :

 

আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ক্রীতদাসত্বের অবসান হয় গৃহযুদ্ধের পর১৮৬৭ সালে। কিন্তু তাতে তাঁদের জীবনসংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনাই কেবল হয়েছিলপূর্ণাঙ্গ মুক্তির স্বাদ তাঁরা তখন 

পাননি। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে কালো মানুষের মানবিকতা  সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দেবার প্রথম প্রচেষ্টা থেকে জন্ম নেয় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক আন্দোলন হার্লেম রেনেশঁস। ততদিনে বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শিক্ষিত হয়েছেনআপন সংস্কৃতি  সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কেকৃষ্ণাঙ্গ মানুষের ভিন্ন ইতিহাস  শ্বেতসংস্কৃতি থেকে ভিন্ন এক বিশিষ্ট কৃষ্টি সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি ল্যাংস্টন হিউয়েস।

 

মিসৌরি শহরের জপলিন- ১৯০১ সালে তাঁর জন্ম। জন্মের সামান্য পরেই তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। দিদিমার কাছে তের বছর বয়স পর্যন্ত বড় হবার পর ল্যাংস্টন তাঁর মা এবং সৎ বাবার কাছে ইলিনয়-এর লিংকনে চলে যান এবং পরে তাঁরা ওহায়োর ক্লীভল্যান্ডে পাকাপাকিভাবে বসবাস করেন।

 

হিউয়েসের জীবন বৈচিত্র্যময়। গ্রাজুয়েশনের পরে একবছর মেক্সিকোতে থেকে তারপর নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একবছর পড়াশুনা 

করেন। এইসময় রাঁধুনীর সহকারী্র কাজলন্ড্রিতে কাজ এবং বাসে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন। নাবিক হিসেবে আফ্রিকা এবং ইউরোপেও  গেছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯২৪ সালে ওয়াশিংটন ডি,সিতে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “দ্য উইরি ব্ল্যুজ” (The Weary Blues) প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে।

 

হিউয়েস উপন্যাসছোটগল্প এবং নাটক রচনা করলেও বিশেষভাবে কবিতার জন্যই তাঁর খ্যাতি। কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের দুঃখ গ্লানি হতাশার পাশাপাশি তাদের সঙ্গীতপ্রিয়তা জীবনীশক্তির কথা উঠে এসেছে তাঁর 

কবিতায়। প্রথম হার্লেম রেনেশঁসএর কৃষ্ণসংস্কৃতিচেতনা  চিন্তাধারা অনেকটাই ল্যাংস্টন হিউয়েসের লেখায় প্রভাবিত হয়েছিল।​]


1 টি মন্তব্য: