অক্টোপাস
বোলেরো চলছে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। শৈল শহরটির শিরা উপশিরাময় রাস্তা সব চেনা রবীনদার। হ্যাঁ, রবীনদা বেঁটে খাটো গড়াপেটা চেহারার। শর্টস আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরেন বাড়িতে। স্ত্রী নেই বিশ বছর হল। বেশিরভাগ সময় কম্পিউটারে নিমগ্ন। বিকেলের অস্তগামী সূর্যের সঙ্গে কফিমগের ঘনিষ্ঠতায় অভ্যস্ত তিনি। যেমন শিক্ষক - ছাত্রী তেমনি ডাক্তার নার্স সমাপতন মনুষ্যজীবনে। কাজে ডুবে থাকা একক ডাক্তারের আনন্দ বলে কিছু থাকবে না? একটু ছুঁৎমার্গী রবীন ঘোষাল চড়া দামে সঙ্গিনী সঙ্গ করেছেন কিছুকাল। প্রেমট্রেমের ঝোঁকে পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সে অনেক টাকা গচ্চা দিয়েছেন। কেউ ধার নিয়ে স্রেফ ঝেড়ে দিয়েছে। সোমা, গার্গী, দেবযানী কেউ ডিভোর্সী, কেউ বিধবা, কেউ অবিবাহিতা কেউ স্থায়ী হয় নি। কি যে অহংকারের ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায় জীবন মাঝে মাঝে। ব্যবহারে রূঢ়তা, ভুল বোঝাবুঝি, সময়ের অভাব কতো কি যে ঘটে যায়। শেষে শূন্যতা। নার্স আর পেসেন্ট পার্টি ঘুরে ফিরে আসে।
এই তো দেবিকার হাত মুঠোয় নিয়ে ভরা ওয়ার্ডের মধ্যে মীরার ভজন গেয়ে উঠলেন। মধ্যবয়স্কা দেবিকা আর বছর কয়েক পরেই অবসর নেবেন স্কুলের চাকরি থেকে। খুবই মায়াময় স্নিগ্ধ চেহারার তিনি। রবীন ঘোষালের প্রতি ডোপামিন রসায়নে বাঁধা পড়লেন। ভদ্রমহিলার প্রচুর অসুখ, যা নেই তাও আছে। সকাল থেকে নেকুনেকু গলায় শুরু হতো আজ না লিভারে দপদপ ব্যথা করছে। বিশ্বাস করুন কানের ভিতর কিরকম চুলকানি হচ্ছে। প্লিজ রবীন হেল্প মি। রবীন ঘোষাল তার আদিকালের ওল্ড স্পাইসের সৌরভ নিয়ে হয় তো স্নান ঘরে ব্যস্ত আছেন।
যাইহোক এবার ঐ শৈল শহরে যাবার কথা। স্টিয়ারিং রবীনের হাতে। আর লং জার্নিতে যা হয় সিনেমার গল্প, ডাক্তারদের ট্যাক্স ফাঁকি দেবার গল্প, শোভন - বৈশাখী নিয়ে আলোচনা আর প্রেমকরা চলতে থাকল। রবীনের বকবক করার ক্ষমতা দেখে দেবিকা আশ্চর্য হয়ে যায়। আর মাঝে মাঝে সেই আকুলতা : দেবী! আজ রাতে হাত পা ছুঁড়লে চলবে না। অক্টোপাসের শুঁড় দেখেছ তো? পিছল, শীতল, স্যাঁতসেঁতে... যা জড়াব না... পুরো ভ্যাজাইনা মনোলোগ উজাড় করে দেব... দেবিকা চন্দ্রমল্লিকা ফুলের মতো দুলে দুলে উঠল সিটের উপর। হোটেল পূর্ব পরিচিত, বুকড।
রবীনের এরকম তোলপাড় করা ক্রিয়াকলাপে দেবিকার ফ্লাইং সসারে চড়ার অনুভূতি হল। তার অচল বাঁ পাটাকে সে সচল করার চেষ্টা করছে , পারছে না। কি এক ব্যথাময় সঙ্গমের আশংকায় সে ছটফট করে উঠল। কিন্তু প্রবেশের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, রবীন নেই। এই তো ছিল বুকের উপর গেল কোথায়। দেবিকা জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল। অচেনা জায়গা ঝরোখা কাটা কি সব বাড়িঘর। দেবিকা বিছানায় মোবাইল হাতড়াতে লাগলো। হঠাৎ তার মনে পড়ল মোবাইল ছাড়াই তারা বেরিয়েছিল... এবার দেবিকার শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে। কি একটা অক্টোপাসের সঙ্গে সে যেন ধ্বস্তাধস্তি করছে। রবীন রবীন চিৎকারে ঝাপটে পড়ছে দেবিকা। অথচ সেই চিৎকার তার গলা দিয়ে বেরোচ্ছে না। খুব ঘামের স্রোত সারা শরীরে।
দুম করে ঘুম ভেঙে গেলে নিজের অসাড় বাঁ পা ছুঁয়ে বুঝতে পারল আবার যে রবীন দশ বছর হল ইহলোকে নেই। এই নিয়ে অগুন্তিবার...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন