শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

অলোক বিশ্বাস-এর ঝুরোগল্প

পোষ্যকেন্দ্রিক হৈ চৈ 

আমার কিছু পরিচিত ব্যক্তি ঘোড়া পোষে। কিন্তু ঘোড়া কেনা ও পোষার অর্থনৈতিক ক্ষমতা আমার নেই। কুকুর পুষলে কয়েক দিনের জন্য কখনো বাইরে যেতে পারবো না। বিড়াল পোষার কথাও ভাবি মাঝেমাঝে। কিন্তু প্রভুর বাড়ি ছেড়ে বিড়ালেরা অধিকাংশ সময় অন্যের কার্নিশে ঘুরে বেড়ায়। ছোটবেলায় গিনিপিগ আর সাদা ইঁদুর পুষেছিলাম। কিন্তু ওদের কিভাবে ডানা গজালো এবং উড়ে গেলো ওরা কিভাবে, বুঝলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত ক'রে আমার মাথায় রঙিন মাছ পোষার নেশা ঢোকে। কিন্তু মাছেরা রাত্রে কেন মারমেডে পরিণত হয়, আমার মাথায় একদম ঢোকেনি। আমার চারখানা বড়ো অ্যাকোয়ারিয়্যাম ছিলো। প্রতিদিন রাতে অ্যাকোয়ারিয়্যামের সব মাছ মারমেডে রূপান্তরিত হওয়ায়, পাড়ার পণ্ডিতরা বললেন, ব্যাপারটা খুব বাজে লক্ষণ। ইনঅস্পিসাস। গোটা এলাকা ভূমিকম্পে ধসে যেতে পারে। পরিবারের সবাই ভয় পেলাম পন্ডিতদের ভবিষ্যত বাণীতে। একদিন সন্ধ্যায় সব মাছ গঙ্গায় ছেড়ে দিয়ে আসি। আবার একদিন দেখি চিলেকোঠার ছাদে নানারকম পাখি বসে আছে, যাদের কাউকে আগে দেখিনি। বাবা একজন পক্ষীবিশারদকে কোথা থেকে ডেকে নিয়ে এলেন। পক্ষীবিশারদ বললেন, ওইসব পাখি সুপারন্যাচারাল পাখি। ওরা ধারালো ঠোঁট দিয়ে বাড়ির সব গাঁথনি উপড়ে দেবে। পক্ষীবিশারদ জানতেন, কিভাবে পাখিদের ফুঁসলিয়ে জঙ্গলে পাঠানো যায়। এরজন্য বাবার কাছে দশহাজার টাকা দাবি করলেন। বাবার কাছে অষ্টাদশ শতকের ব্রিটেনের কিছু কয়েন রাখা ছিলো। পক্ষীবিশারদ সেইসব কয়েন নিজের হেফাজতে নিয়ে পাখিদের সঙ্গে অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। পাখিরাও সব তাঁর ইশারামতো শুশুনিয়ার জঙ্গলে উড়ে গেলো। এরকম ঘটনা একের পর এক ঘটার পর একদিন বান্ধবী সুচরিতা  বললো, প্রাণীদের পোষার চাইতে ওদের নিয়ে গল্পলেখা শুরু করাটাই ভালো হবে। প্রাণীদের নিয়ে চার-চারটে বই লিখে ফেললাম আর প্রতিটা বই বেস্ট-সেলার হয়ে গেলো। বাবা একদিন আমাকে আফ্রিকার জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলেন প্রাণীদের সম্পর্কে আরও জ্ঞান আহরণ ক'রে সেই বিষয়ে একের পর এক বই লিখে যেতে। আমার পিতা কার কাছে শুনেছিলেন যে, পশুপাখিদের নিয়ে কেউ অন্তত পঞ্চাশটা বই লিখতে পারলে, তিনি নাকি নোবেল অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন