বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি প্রণব বসুরায়

 



কবি প্রণব বসুরায়

আজন্ম শ্রীরামপুর নিবাসী। কর্মক্ষেত্র ছিল অধুনালুপ্ত এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক। কবিতা প্রথম ছাপা হয় ১৯৬৪ সালে। তাঁর পরিচিতি গত শতকের সাতের দশকের কবি হিসেবেই। প্রথমে যুক্ত ছিলেন “কণ্ঠস্বর” পত্রিকায়, প্রকাশক হিসেবে। একক সম্পাদনায় “শ্রাবস্তী” “বিনোদন” প্রকাশ করেছেন। সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন “শীর্ষবিন্দু” পত্রিকার সঙ্গে। পরে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ওই পত্রিকা একক সম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন। ২০১৮ সালে পত্রিকাটির ৫০ বছরে, যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশ করেছেন “শীর্ষবিন্দুঃ কবিতার ৫০ বছর” নামের কাব্য সঙ্কলন। নিজের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা এখন অবধি ৬টি। লিখেছেন এবং এখনও লিখছেন ছোটো বড়ো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ব্লগজিনে।







ইচ্ছাপত্র 

 

থালায় রেখেছ কিছু ভাতপুড়ে যাওয়া

পাশে দেখি মাছি বসা নষ্ট শাকের আয়োজন--

সপ্তমীর ঘষা চাঁদ-- যদিও মেঘেই আটক

সেও আজ ব্যঙ্গ ছড়ায়

জলে ডোবা মানুষের দিকে...


এখনও ভাসেনি লাশশুয়ে আছে কাদার গভীরে

যথেষ্ট পচন ধরে গেলে

জল তাকে নিজেই ওঠাবে


পত্রকার বাবুগণঅসামান্যা বিবিগণ

শনাক্তকরণে যেন দ্বিধাহীন ঐক্যমত্য হয়

--- ইচ্ছাপত্রে শুধু এইটুকু লেখা




কীর্তিচিহ্ন 


এত শব্দযেন ভাঙছে বিশ্বাস

ভেঙে যাচ্ছে জলবায়ুআকাশ সমুদ্র--

আমাদের পোশাক খুলে নিয়েছে চাঁদের দাপট

আমরা তাই উলঙ্গ দাঁড়িয়ে আছি নৌকোর জন্য

আর সময়ে

চোর চাঁদ তোমার শরীরের সব সংবেদনশীল কেন্দ্র

অবলীলায় ছুঁয়েমসৃণ উরুর দিকে যেতে যেতে

মাঝ পথে থমকে দাঁড়াল...

ঘোর লাগা শীৎকার স্বতই উঠে আসে সে বলয় থেকে--

চাঁদ আর থাকেনি এরপরসরে গেছে গাছের আড়ালে


আসেনি এখনও খেয়াচলো বসি ঘাটের কাছেই

চাঁদের দংশনগুলিএকে একে সব মুছে দেবো



শূন্য-বোধ 


আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে ভাবিমৃতের পোশাকগুলির

কি হয়কেউ কি নেবেনেয় কি কেউপড়ে থাকে

ঘর জোড়া করে?


আজ আলমারির সামনে আমিড্রেসিংটেবলের আয়না আমায় দেখছে

আমি সার্ট-প্যান্ট গুনছিপাঞ্জাবি-পাজামাঅন্তর্বাস...

কি হবে এগুলোর

উত্তরীয়গুলো বিশেষ স্মরণিকা। আয়না দেখছে আমার মুখ

ক্রমেই বিষণ্ণ ঘর্মাক্ত হচ্ছেচুলের রঙ ঝরে যাচ্ছেএবং

ধীরে ধীরে বায়ুতে মিশে যাচ্ছি


খোলা আলমারির সামনে আমি বেমালুম শূন্য হয়ে যাচ্ছি


সঙ্গী 


অশান্ত ঘোড়া ছুটে বেড়াচ্ছে অলিতে গলিতে

তার নালের আঘাতে ধুলোয় জমছে রক্তের কণা

খুরের ওপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ব্যথায় নীলতবু

যেহেতু যুদ্ধ থামে নি

পর পর ব্যূহ ভেঙে

যেতে হবে সম্ভাব্য বিজয়ী শিবিরে...


ঘোড়ারা জানে না সেখানে অশ্ব-চিকিৎসক নেই

আদর সোহাগ দিতে ঘোটকীরা কুরুক্ষেত্রে আসেনি কখনও


ক্ষাত্র ধর্মেমৃত্যু হলে

ঘোটকীও যথাযথ সঙ্গী পেয়ে যাবে



শহরের বাড়িগুলি 


সোনার পয়সা আমি হারিয়ে ফেলেছি বলে

চোখ জুড়ে জ্বালা হতে থাকে

দুই চোখে তাই জলের প্রপাত...

তৃতীয় বাতাস এসে অনায়াসে সরিয়ে দেয়

থালা গেলাস...

যোগ্যতার কোন শংসাপত্র দখলে না থাকা্য

হেঁটে যেতে হয় জ্যৈষ্ঠ-দুপুরেছায়া ছেড়ে


বিনা টিকিটের যাত্রী হয়ে চলে যাবো

অচেনা স্টেশনেমাধুকরী সম্বলে


এই অবসরেশহরের বাড়িগুলি আরও বড়ো হোক



শর্তভঙ্গেবদলে যাওয়া 


প্রতি দিনই কিছুটা বদলে যায়প্রতি বিকেলও

প্রতিটি আলাদা ক্ষণের প্রতীকি শ্বাস প্রশ্বাসে

জেগে যায় কোলের শিশুও। সেও তবে থাবার কবলে!

তাকে আমরা পার্কে নিয়ে যাই,

কিনে দিই আইসক্রিম আর সজাগ থাকি পোষাকের দিকে


শর্তভঙ্গের খেলায় এতটা নিপুন দেখে

রাগে কপাল দপদপ করে,

কষ্ট কমার ওষুধ আসে নি কোথাও...


রাত একটায়

ঘরের আলো সুর য়ে ভাঙছে দেখে

কেউই আর অবাক হয় না তেমন..


ঝাড়াই বাছাই 


(* বলেছিলে--'আসছি')

জলের পাহাড়ে নামিঅতঃপর...

সাঁতারের চেয়ে তলিয়ে যাবার চোরা টান

ধরে ফেলেছে জামার হাতল--

চামড়া উল্টে দেখছি আমার রক্তের রঙ নীল

অক্সিজেন ছাড়াই শোধিত হয়ে চলে যাচ্ছে

দূরবর্তী আরেক কামরায়...


আমার এই বাড়ির দু কামরার মাঝে

অনেকটা সরকারী জমি--পাবলিক প্রপার্টি

তাই এক কামরার কথা অন্যটায় পৌঁছতে

অনেক অবাঞ্ছিত ধুলো বিষ লেগে যায়


ঝাড়াই বাছাইয়ের ব্যবস্থা তাই বিশ্রাম পায় না...



যেভাবে 


যেভাবে ছড়িয়ে আছে অনু রেণু স্মৃতি

যে রকম থাকে নতুন বন্দুকের তাজা ধোঁয়া

পাজামার অন্তর্লীন খোপে সাবলীল দড়ি

অস্বীকার করা ধর্ষণতুল্য -- এই বিবেচনায়

মেনে নিতে হয় যে প্রজাপতি উড়ে গেলে

মাইনাস ডেসিবল শব্দ আছড়ে পড়ে জঙ্গলেবাদাড়ে

ট্রেঞ্চে থাকা সৈনিকের টুপি ঈষৎ উত্তোলিত করে

সেই বায়বীয় শক্তি আলোয় ডুবে যায়


হতাশা বা উচ্ছ্বাসের কারণ ছাড়াই

এসোআমরা সেনা-অভিবাদন দিতে

ধোপদুরস্ত পোশাক  বুটের পালিশের দিকে

নজর দিই


২টি মন্তব্য: