দেশ আর দশ
মুম্বাইয়ে আমি যে আবাসনে থাকি, তার সদস্যদের অনুরোধে,করোনা অতিমারীর সময়ে সংবাদপত্র পড়া ছেড়ে দিয়েছিলুম, মজার ব্যাপার যে তারপর থেকে খবরের কাগজ পড়তে আর ভালো লাগে না। চাকরি করার সময়ে কয়েকটা কাগজ অফিসের খরচে পেতুম । বিভিন্ন কাগজের ন্যারেটিভ মালিকের ইচ্ছেমতন গড়া হয়। কাগজ বন্ধ করে সে-বালাই ঘুচেছে । এখন, সময় পেলে, মোবাইল, ইনটারনেট আর টিভির খবর দেখি, নানা চ্যানেলের নানা ন্যারেটিভ। তা থেকে ছেঁকে একটা ন্যারেটিভ গড়ে নিই । এছাড়া উপায় নেই । সময় পেলে এইজন্যে বলছি যে মুম্বাইতে এসে সংসারের অনেক কাজ করতে হয় ; আমরা বুড়ো-বুড়ি দুজনে মিলে যা পারি, করি।
বেল বাজলো। সন্দীপ প্রামাণিক। কলকাতা থেকে পাটালি গুড় এনেছে। ওর কলকাতার বাসায় এক বছর রাখাছিল, আমি আনতে বলার পর । কয়েকদিন আগে এসেছে, বাই এয়ার, যাত্রাপথে গলে গেছে পাটালিটা। সলিলার ডায়াবেটিস বলে রোজ মেথিভেজানো জল আর মেথি খাচ্ছে। গোবিন্দভোগ চাল পাওয়া যায়, একটা মাছের দোকানে । ওদিকে গেলে কিনবো, পায়েস খাবার জন্য । সন্দীপ আগেরবার দুটো রঙিন পায়জামা করিয়ে এনে দিয়েছিল কলকাতা থেকে ; প্রস্টেটের ইউরিনারি ইনকনটিনেন্সের জন্য বলেছিলুম ওকে।অর্ঘ্য দত্তও দুটো লুঙ্গি এনে দিয়েছে কলকাতা থেকে । লেখক হবার ফায়দা তুলছি ।
আমার ফ্ল্যাটের সামনের মারোয়াড়ি পরিবারও মাঝে-মাঝে ওদের তরকারি দিয়ে যায় । ওদের দুই ভাইয়ের একদিন হাতাহাতি হয়েছিল কে কোন ঘরে শোবে তা নির্ণয় করা নিয়ে । বড়ো ছেলের বউয়ের দুটো মেয়ের পর ছেলে চাইছিল; গর্ভবতী হয়ে গেছে সেকথা বাড়িতে বলেনি, সলিলাকে দিয়ে প্রেগনেন্সি কিট আনিয়ে শিয়োর হয়েছিল । গণেশপুজোর সময়ে তিন ঘণ্টা লাইন দিয়ে লালবাগের রাজা নামে খ্যাত গণেশের কাছে মানত করেও মেয়ে হলো । একই সময়ে বউটার বোনের ছেলে হয়েছিল, তৃতীয়বার ছেলে । সন্তান বদলাবদলি করে নিলো, কিন্তু ক্রমে টের পেলো ছেলেটা কথা বলতে পারে না । ইতিমধ্যে ছোটো বউটার ছেলে হওয়ায় ছোটো ছেলের কদর মা-বাপের কাছে বেড়ে গেছে । ছেলে পাবার জন্য ছোটো ছেলেটার বউ রোজ সকালে পাড়ার মন্দিরের গরুকে তুলসীপাতা খাওয়াতে যেতো ।
যেহেতু আমাদের দেশটা এতই কলুষিত, মিথ্যা-আক্রান্ত, অস্থির, অতিরঞ্জিত আর অন্যায্যতায় ঠাশা, নিজের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যা অনুভব করা যায় শুধু তাই বিশ্বাস করা উচিত । ভারতের যে কোনও জায়গার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ ইন্দ্রিয়কে শক্তিশালী করে তোলে। এই কারণে, বাঙালিরা যদিও অদক্ষ মন্ত্রী, স্থানীয় নেতা, অধ্যাপক, আমলা, সাংবাদিক আর জোচ্চোর ব্যাবসাদারদের সহ্য করে, কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত , ধ্রুপদী নৃত্য, নাটক, টেলিভিশন, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, বাংলাখাবারের অযোগ্যতা সহ্য করবে না। বিশৃঙ্খলা, দুর্যোগ আর প্রতারণার এই দেশে, কখনও কখনও শুধুমাত্র সৌন্দর্যকে বিশ্বাস করা যেতে পারে। আনন্দ নিয়ে দর কষাকষি করা যাবে না । আর ক্ষুধার্তের কাছে খাবারই একমাত্র স্বর্ণমুদ্রা।
পড়লাম। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনএখনও এই বয়সে সাহিত্য সৃষ্টিতে মলয় রায়চৌধুরীর উৎকর্ষতা ও সক্রিয়তা আমাকে মুগ্ধ করে।
উত্তরমুছুন