সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

সম্রাট লস্কর-এর ঝুরোগল্প

ঋদ্ধিমান সেই ম্যানেকিন

ম্যানেকিনটাকে ঋদ্ধিমান প্রথম দেখে দিন কয়েক আগে। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে রি-ইউনিয়ন ছিল সিটি সেন্টারে। বেশ কিছুদিন বাদে নিজের শহরে ফিরেছে। আগে বছরে দু-তিন বার আসত। এবার এল পাক্কা দেড় বছর পর। অতএব, বন্ধুদের সাথে আড্ডা তো একটা দিতেই হবে। তাই সেদিন সিটি সেন্টার। আর সেখানেই এক নামী বস্ত্রবিপণির শোকেসে ম্যানেকিন পুতুলটা দেখে থমকে গেল ঋদ্ধিমান। পাশে তখন বন্ধুরা।

 

    কী রে, দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? কিছু কিনবি নাকি?  

    না না, এমনি।

 

ঋদ্ধিমান বন্ধুদের নিয়ে এগিয়ে গেছিল ফুডকোর্টের দিকে। কিন্তু ওর মন জুড়ে সেই ম্যানেকিন। নাকি দয়িতা? ম্যানেকিনটার গায়ে যে টপ আর স্কার্ট দয়িতার পরনেও ছিল একই পোশাক। সেই শেষ দিনে। একেবার সেই পোশাকটাই যেন, এক রং, এক স্টাইল। দয়িতার সঙ্গে সেই তার শেষ দেখা। খুব সুন্দর কেটেছিল সেই সন্ধেটা তাদের। তারপর থেকেই দয়িতা নিখোঁজ। একেবারে উধাও। ঋদ্ধিমান আর দয়িতার ঘনিষ্ঠতার কথা দুজনের বাইরে তেমন কেউ জানত না। তবে তা সত্ত্বেও পুলিশের জেরার মুখে ঋদ্ধিমানকে পড়তে হয়েছিল। পুলিশি অনুসন্ধানে অবশ্য কোনো কিনারাই হয় নি। সাত বছর কেটে গেছে। দয়িতাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি, ওর সম্পর্কে কোনো খবরও পাওয়া যায় নি। ঋদ্ধিমানের সঙ্গে সেই সন্ধেতে দেখা হওয়ার পর পরই যেন পৃথিবী থেকে মেয়েটা একেবারে ভ্যানিস হয়ে গেল।

 

আজও ম্যানেকিনটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঋদ্ধিমানের সেই পুরোনো কথাগুলো মনে এল। কাল সে ফিরে যাচ্ছে কর্মস্থলে। আজ অনেক কিছু করার ছিল কিন্তু সেগুলো না করেই এই ভরদুপুরে সে এখানে এসে ম্যানেকিনটাকে দেখছে। ম্যানেকিনটার গায়ে আজও সেই এক পোশাক। চোখের দৃষ্টি বড়োই জীবন্ত আজ। ঠিক যেন দয়িতার মতো। দয়িতা কি ম্যানেকিন হয়ে যেতে পারে, ঋদ্ধিমান ভাবল। বেশ অনেকক্ষণ শোকেসটার সামনে দাঁড়িয়ে রইল ঋদ্ধিমান। হয়তো আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েই থাকত মায়ের ফোনটা না এলে। না, এবার ফিরতে হবে।  

 

এস্কালেটর ধরে নেমে যাচ্ছে ঋদ্ধিমান। ম্যানেকিনটা এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওর দিকে। কাল ভোরে ওটাও কি আবার উধাও হয়ে যাবে? চিরকালের মতো?    

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন