অরন্ধন
গতকাল মাঝবয়সী রাতে আমি যখন মারা গেলাম -
বুকের ভেতরে আটকানো ভীষণ ভারী পাথরটা আচমকা
হালকা হয়ে উড়ে গেল, আর আমিও উড়তে শুরু করলাম
আমার খুব ভালোবাসাজন আত্মীয়রা খুব বিরক্ত হয়ে
আলোচনা করতে লাগল, "বুড়ো মরেও জ্বালিয়ে গেল!
এই মাঝ রাতে মরার কোনো মানে হয়!"
আমার পরমপ্রিয় ছেলেমেয়েরা, আমার ধুপছাঁও অবস্থায়
থাকার সময়ে এ ওর ঘাড়ে দায়িত্ব ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা থেকে বেঁচে
হিসেব কষতে বসল দাহ, কবর, নাকি চিল শকুনের খাদ্য
খরচ কম কিসে হয়; পারলৌকিক বাড়িতে নাকি কোনো ঈশ্বরের আবাসে?
মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে মোল্লা - পুরুত - ফাদার তুমুল তর্কে মেতে গেল
চিতা নাকি কবর নাকি ওয়াচ টাওয়ারের চিলেকোঠা
কোথায় রাখা হবে আমার ভেঙে ক্ষয়ে যাওয়া শেষ অবয়ব!
শিমুল তুলো হয়ে যাওয়া আমি উড়তে উড়তে এক ভাঙাচোরা মাটির দেওয়ালে
থিতু হতেই ভাসমান চোখের সামনে হীরু বাগদি এবং বাগদিনী অঝোর-
"আহা বড় ভালো মানুষ ছিল গো! আজ রাতে আমাদের খিদা নাই!"
মাটির দেওয়াল ছুঁয়ে বহু কষ্টে মনে পড়ল সেই
গত জন্মের মন্বন্তরে একবার যখন ওরা না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছিল
পলিথিনের মোড়কে সামান্য চাল ওদের ভাতের হাঁড়িতে হাসি এনেছিল,
বাগদি আর বাগদিনী অঝোর কত কম পেয়ে …
শিমুল তুলো হয়েই ফের উড়ে গেলাম, প্রথম বর্ষণের
এক দলা কান্না ঝরিয়ে আকাশ তখন ঘন কালো,
নীচের পৃথিবী চাওয়া পাওয়ার পরিষ্কার দুটো দেশে ভাগ হয়ে গেছে।
স্বাগত রঙিন ক্যানভাস।
উত্তরমুছুনচমৎকার
উত্তরমুছুন