বুধবার, ১ জুন, ২০২২

জয়িতা ভট্টাচার্য-র ঝুরোগল্প

সেইসব খিদেরা 

 

দুটো কালো সরু সরু হাত অবিরাম নড়ছে।আশপাশে আরো অনেক কালো হাতের নড়াচড়া যেন

নিঃশব্দ সন্ত্রাস।নিস্তব্ধ আর অস্পষ্ট ঘন বৃষ্টির মধ্যে অজস্র ঝাপসা হাত ভয় দেখাচ্ছে।সিগন্যালে আটকে আছে জীবন অনেক্ষণ। সবুজের সংকেতে রেখা অতিক্রম করে পৌঁছে যাবে অভিষ্টে সকলে।আশপাশে সমস্ত কঙ্কালসার হাতের ওঠানামা দেখতে দেখতে শিউরে ওঠে সে। 

মণিমালা আজকাল দিনদুপুরে ভুলভাল দ্যাখে।যেন এক ধূসর মরুভূমি ভরে গেছে কালো হাতের সমুদ্রে। ক্ষুধার্ত আর শীতার্ত আর্তি।তার এবং লক্ষ কোটি এই গ্রহের খিদের আগুন চারিদিকে ঝলসে উঠছে বিদ্যুৎ চমকে।

গাড়িগুলো থমকে আছে।মানুষগুলো পাথর।শব্দময়তা থেকে পালাতে চাইছে মণিমালা।পাশে বসে আছে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিক।

ভেতরে মন ডানা মেলে পক্ষীরাজের মতো।অঝোর বৃষ্টি একসময় থেমেও যায়। যেমন করে একপেট খিদে নিয়ে এসে দাঁড়াতো মানুষটা। বাসনের আওয়াজ হতো তারপর।প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ত। জুড়িয়ে যেত পৃথিবী।

সবই সময়ের ফের।সবজে আলোয় জীবন গতি পায়।মেঘ সরে যায়। বৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে থমকে থাকে।

মণিমালার গাড়ির কাচে বৃহন্নলার হাসিমুখ। একরাশ রজনীগন্ধার মতো শুভকামনা জানিয়ে যায়। বোধহয় ওরাই একমাত্র যারা কিছু দিলে এবং না দিলেও আশীর্বাদ করে যায়।

দিনের পর দিন তাৎপর্যহীন দরকারি কাজ তাড়া করে।মণিমালা লেখক।লেখিকা শব্দটি ব্যবহার করে না।ভালো করে কথা বলতে শেখেনি মণিমালা।এখন তাই অক্ষর দিয়ে জানান দেয় তার দেখা আর শোনাগুলো।যদিও কন্ঠ জিহ্বা তার সুস্থ কিন্তু মন মজানো শব্দের ব্যবহারে প্রতিবন্ধী মণিমালা।ক্রোধ আর ভুল বোঝার কর্কট রোগের মধ্যেই বেঁচে থাকার এই সিদ্ধান্ত তার ভাষা জীবনে।গাড়িটা চলছে।জলের ধারায় নানা ছবি ফুটে উঠছে এখন কাচে।

ওইপার জোড়া শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

 

1 টি মন্তব্য: