বুধবার, ১ জুন, ২০২২

কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প

 

ছুরি কাঁচি

 

আচ্ছা, তুমি তোমার অবসর সময় কীভাবে কাটাও? প্রশ্নটা খুবই সরল এবং সাধারণ। কোনো কিছু ভেবে অথবা না ভেবে কেউ কাউকে এমন প্রশ্ন করতেই পারে, অথবা করেও। কিন্তু সিঞ্চিতার কাছে এই প্রশ্নটাই সাংঘাতিক জটিল বলে মনে হয় এবং কথা প্রসঙ্গে কেউ তাকে এই প্রশ্ন করলে সিঞ্চিতা নিতান্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, আমার হাতে কোনো অবসর সময়ই থাকে না কখনও! আবার কখনও বলে, আমি ঘুমোই। নাক ডেকে ঘুমোই। সিঞ্চিতা নিজে অবশ্য জানে যে, এই দুটো উত্তরই বানানো। আসলে, সে শুধু রাতেই ঘুমোয় এবং অন্যের কাছে জেনেছে, ঘুমের সময় তার নাক ডাকে না। আর সারাদিন তার কাজ থেকে অকাজ বেশি এবং সেইসব কাজ অকাজের পরও তার হাতে থাকে অনেকটা ফাঁকা সময়, যাকে অবসর সময় বলা যেতে পারে।

সিঞ্চিতা সত্যিই ভেবে পায় না, এতটা ফাঁকা সময় সে কী করবে বা কীভাবে কাটাবে! বিনা কাজে বসে থাকলেই তার সারাটা মন বা মস্তিষ্ক জুড়ে উজিয়ে আসে কত যে বিচিত্র চিন্তাভাবনা, কতরকম যে উদ্ভট কল্পনা, কীসব যে সৃষ্টিছাড়া পাগলামো! নিজেকে সত্যি সত্যিই পাগল পাগল মনে হয় তখন। সিঞ্চিতার মনে পড়ে, তখন সবে সে কৈশোরে এন্ট্রি নিয়েছে। স্কুলের বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। সময়টা দুপুর। রাস্তাটা ফাঁকা। হঠাৎ দেখল একটা বুড়ো মতোন লোক তাকে দেখিয়ে প্যান্টের ভেতর থেকে বিশাল লিঙ্গটা টেনেটুনে বের করে হিসি করতে শুরু করল। সিঞ্চিতা আচমকা এতটাই ঘাবড়ে গেছিল যে, হাঁ করে বেকুবের মতো সেই হিসির দৃশ্য পুরোটা দেখেছিল। আর তারপরই সম্বিৎ ফিরে পেতে ভয়ে লজ্জায় ঘেন্নায় দৌড়েছিল বাড়িতে। সেদিনের সেই  ঘটনাটা মনে পড়লেই সিঞ্চিতার ইচ্ছে হয়, এখনই সে একটা বড় কাঁচি হাতে রাস্তায় বের হবে, আর কাউকে প্রকাশ্যে পেচ্ছাপ করতে দেখলেই কুচ করে তার লিঙ্গটা কেটে দেবে।

এরকম অনেক ভাবনাই তার মনে আসে যখন সে কর্মহীন অবস্থায় চুপচাপ বসে থাকে। যেদিন নভোজিৎ তার সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ করে চিত্রিতার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক শুরু করল, সিঞ্চিতা এতটাই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়েছিল যে, একফোঁটাও জল বেরিয়ে আসেনি তার চোখ থেকে। মুখ থেকেও বেরিয়ে আসেনি একটাও শব্দ। শুধু মনে হয়েছিল, তার শরীরের ভেতরটা কেমন যেন সাড়হীন হয়ে গেছে, মাথাটা বেবাক খালি। নিতান্ত জড় পদার্থের মতো কতদিন যে বিছানায় সে শুয়ে  থেকেছিল! ইদানীং তার মাথাটা প্রায়ই দপদপ করে যন্ত্রণায়, শিরায় ধমনীতে পাক খেতে থাকে প্রচন্ড উষ্ণ লাভাস্রোত। হাতের পাতা নিশপিশ করে চরম   অবাধ্যতায়। সেদিনের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই উঠে দাঁড়ায়। পুরনো জিনিসের আলমারি খুলে হাতে তুলে নেয় একটা লকলকে ফলার ছুরি। ভাবে, এখনই সে ছুটে যাবে নভোজিৎ চিত্রিতার ফ্ল্যাটে। বেশি দূরে নয়, মিনিট দশেকের রাস্তা। তারপর চিত্রিতার সামনেই ছুরিটা আমূল বিঁধিয়ে দেবে নভোজিতের বুকে। হ্যাঁ, চিত্রিতা তার সংসার ভেঙেছিল একদিন। আজ সিঞ্চিতা ভেঙে দেবে চিত্রিতার সংসার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন