বুধবার, ১ জুন, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি তৈমুর খান

 


কবি তৈমুর খান

জন্ম​ :​ ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। 


পিতা মাতা :​ ​জিকির খান নাওরাতুন। 

পড়াশোনা :​ ​বাংলা ভাষা সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। 

 

পেশাউচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক  

প্রকাশিত কাব্য : কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১) ইত্যাদি। 

 

পুরস্কার : নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কারকবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার দৌড় সাহিত্য সম্মান। 






কল্যাণী

 

 আজ আর কল্যাণী নেই?

    শুধু তাকে ডাকি বারেবারে

          আমাদের শোকাবহ জুড়ে 

                  ভীরু তমসার গান ঝরে

 

কে দেবে আলো জ্বেলে তবে?

       সন্ধ্যার পানপাত্রে মদিরা ঢেলে

                       সাজাবে টেবিলে?

  আর সস্নেহ উষ্ণতার স্পর্শে জাগাবে!

 

আমরা সবাই কল্যাণ

      আমাদের ঘরকন্না জুড়ে 

                       থাকে কল্যাণী

              তার কাছে সান্ত্বনা পাই বলে

       আমরা এখনও আত্মহত্যা করিনি

 

কত সংকট আজ পার হচ্ছে যুগ

 আমাদের অসহায়তায় ডুবে যাচ্ছে চাঁদ

                        কল্যাণী দেখে  যাও

তোমার কল্যাণেরা আজ পুষেছে বিষাদ!



পাঠশালা

 

 প্রাচীন স্কুলগুলি স্মৃতির রোদ্দুরে জেগে আছে

 আমরা চট পেতে বসি বটের ছায়ায়

 নীলজামা গায়ে, দ্রুত পাখিদের আনাগোনা

 পর্যাপ্ত রঙের ভাষা মেলে দেয়;

 ভাষার সংস্কৃতি বোঝে নবীন সাধনা।

 

বর্ণপরিচয় হাতে ঈশ্বর দাঁড়ান

 ঈশ্বরের দীর্ঘছায়ায় আমরা মুগ্ধতা ভিক্ষা করি

 পাতা উল্টাই শুধু

 জীবনখাতায় ছবি আঁকি

 

 কত ছবি!

 ছবিরাও প্রাণ ফিরে পায় রোজ

 পাঠশালা হেসে ওঠে; আর সব প্রাচীন পদ্ধতি।



ঝড়

 

 ঝড় আসছে।

 আমরা মরুর উট। কথা বলি না। চেঁচাই না।

 ঝড় সামলে নিই বালিতে মুখ গুঁজে।

 যারা ঝড় আনছে তারাই শুধু চেঁচাচ্ছে।

 আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আর নিয়ত বাঁশি বাজিয়ে দিচ্ছে।

 কোলাহলে কোলাহলে একটা দেশ 

           ক্রমশই দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে কেবলই।

 

দেশের বসন্তকে শুষে নিচ্ছে গ্রীষ্ম।

 দেশের শরৎকে ঢেকে দিচ্ছে শীত।

 বর্ষা আনছে দুর্যোগের মেঘ। ঘন কালো মেঘ।

 ঘনঘন বজ্র ছুঁড়েছে এসে।

 

 কার কী সফলতা এখন?

 ভাবতে ভাবতে রাত নামছে। 

 বার্ধক্য এসে পিঠে বসছে আমাদের।

 কয়েকটি মরুর পাখি উড়ে যাচ্ছে আকাশের দিকে।

 আমরাই শুধু বাকি যৌবনটুকু 

           দিয়ে যেতে চাই মরু সভ্যতাকে।

 

 যারা ঝড় আনছে তারা কেউ সভ্য নয়

 যুদ্ধবাজ ধ্বংসকারী গভীর মিথ্যুক



খিদে

 

 পালাতে পারি না কোথাও

 আমি আমার ছায়া কাছাকাছি থাকি

 দুপুরে গরম ভাতের ঘ্রাণ এলে

 খিদে পায়

 রোজ রোজ খিদে পায় শুধু!

 

 এই পুকুরের ঘাটে দু'দণ্ড বসি

 বহু পুরনো সিঁড়িতে দেখি নূপুরের শব্দ লেগে আছে

 আলতা পরা খালি পা কার উঠানামা করে?

 

 দুয়ার খোলা আছে

 বাগানের হাওয়া আসছে বসন্তের আমন্ত্রণ নিয়ে

 সব কুঁড়ি ফুটবে এবার অনুরাগের পরশ পেয়ে!

 

 পালাতে পারি না,

 মাঝে মাঝে কোকিলের মতো ডাকি

 কেন ডাকি?

 আমার ছায়াটি বোঝে সব, শুধু আমিই বুঝি না;

 

 আমার শুধু খিদে পায়

  আর এক অন্য খিদে

খিদের আগুনে হৃদয় সেঁকি!


প্রস্তুতি

  

 তোমার আঁচলে কত নক্ষত্র ফুটেছে

 বিচিত্র আলোর ঝিকিমিকি

 আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি!

 

ওখানে হৃদয় রাখবো তোমার আলোয়

 ওখানেই রেখে দেবো আমার বাঁশির সুর

 ওখানে কখনো হবে না অন্ধকার!

 

শুধু রাত্রির সন্তান হয়ে বেঁচে থাকা যায়?

 মাইল মাইল রাস্তা হেঁটে জীবনের আয়ু হলো ক্ষয়

 অন্ধকারে নিজেকেও বিশ্বাসঘাতক মনে হয়

 

সারারাত যদিও জেগে থাকি

 সারারাত যদিও নক্ষত্রফুল কুড়াই

 তবু এক উজ্জীবনের ডাক আসে শুনি

 

 দীর্ঘশ্বাসগুলি লুকিয়ে ফেলি

 আর তৃষ্ণাগুলি অস্বীকার করি

 গভীর নির্জনে একা চুপি চুপি যাই



এই জন্ম

 

 যে শব্দ গান হয়নি

    আমি সে শব্দের কাছে যায়নি কোনোদিন;

 যে মেঘ বৃষ্টি দেয়নি

     আমি কি সেই মেঘের কাছে গেছি?

 আমার শস্যের ক্ষেতে শব্দ আর গান

 আমার মাথার ওপর মেঘ আর বৃষ্টির সম্মোহন।

 

 এই জন্ম শুধুই বাঁশি

  জীবন শুধুই ভেজা ভেজা অভিমান

 

 দুপুর বিকেল হয়ে আসে

 বিকেল রাত্রির ডাক পায়

 গেরুয়া আলোর পথে নামে রাঙাচেলি

 রাত্রিতে হেসে উঠবে অদ্ভুত জ্যোৎস্নায়!

 

 বিশ্বাসের ধ্বনিগুলি বেজে ওঠে

 অলৌকিক সমুদ্রের নৌকাগুলি ছেড়ে যায়

 একে একে সমস্ত নাবিকেরা সাদা পোশাক পরে

 আমিও ধূসর গন্ধ মুছে ফেলি মনে মনে

 

 উপলব্ধির সব জানালায়

 আমার আসক্তি তীব্র হলে

 আবার আবার মেঘ জমে

 শব্দেরা গান হয়ে ফেরে।



পাটনি কথিত

 

 ওগো নদী, আমি চলে যাচ্ছি

 আর ফিরবো না কোনোদিন

 আমার নৌকা ভাসিয়ে দিলাম

 

এখন আমি বিপন্ন স্মৃতির ভেতর

 বানিয়ে নিয়েছি ঘরবাড়ি

 এখন কান্নার জলের পুকুরে স্নান সারি

 

বহুদিন দেবী আসে না আর

 গাড়ি চেপে চলে যাচ্ছে সব দেবী

 সেতুর বাঁধনে বন্দি সব নদী সভ্যতার

 

কার স্পর্শে কে-বা সোনা হয়

 কার বরে কাদের সন্তান দুধ-ভাত খায়

 কিছুরই হিসেব জানা নেই তার

 

শুধু পতাকা উড়ছে চারিদিকে

 হানাহানি আর কুৎসার গানে হাততালি

 সব রাস্তা জুড়ে নেমেছে বাহিনী

 

এই পথে কবে আসবে আবার

আমাদের নবজন্মের বিদ্যা সুন্দর?

ছেঁড়া অন্নদামঙ্গল হাতে দাঁড়িয়ে আছে রায়গুণাকর!


বিশ্বাস

    

 আমরা বিশ্বাস পুষে রাখি

 বিশ্বাস এসে আলো জ্বালে

 আলোকিত ঘরে

 আমাদের শিশুরা চাঁদ দ্যাখে।

 

 চাঁদ কি টিপ দিয়ে যায়

 তাদের কপালে?

 

 দুধ নেইদুধ খাওয়ার বাটি নেই

 তবুও বিশ্বাস আছে আমাদের।


1 টি মন্তব্য: