রবিবার, ১ মে, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায়


 


​কবি ​ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায় 

(জন্ম : ২৩ মে, ১৯৮৩) নব্বইয়ের অন্ত্যপর্বের কবি প্রাবন্ধিক বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক। চর্চার বিষয় : কবিতা, তুলনামূলক সাহিত্য, অনুবাদতত্ত্ব এবং ইকোক্রিটিসিজম। বাবার অনুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু পাঁচ-ছয় বছর বয়সেই। এযাবৎ প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ সাত এবং সম্পাদিত সংকলন  পাঁচটি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থজ্যোৎস্নার অ্যালবাম খুলে’ (২০০০) অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হলো : ঈশ্বরের হাত, মেধাবী ব্লেডের ভাষা, কবিতার জোড়া কলম (যুগ্ম), নীল দিনলিপি, পাঁচকলম কবিতা (যৌথ) ঋতমের কবিতার ভাব ভাষা সমকালীন, কিন্তু আলগা চটক নেই। বরং তাঁর কবিতা মেধাবী হয়েও রোম্যান্টিক বেদনায় স্পন্দিত, তাঁর জীবনচর্যার প্রতিরূপ তাঁর কবিতা কৃত্তিবাস, পরিচয়, মহাদিগন্ত, কবিতা সীমান্ত, উনিশ-কুড়ি ইত্যাদি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে একাধিকবার। ২০০৪ সালে পেয়েছেন কৃত্তিবাস পত্রিকার ২৫ বৈশাখ সংখ্যার মনোনীত কবির সম্মান। এছাড়াও অভিযাত্রী, কথাকৃতি ইত্যাদি নানা পত্রিকার সংবর্ধনা পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে বর্তমানে অধ্যাপক সমালোচক সত্তার চাপে কবিতা-চর্চা কিছুটা উপেক্ষিত হলেও প্রতিটি মুহূর্তই তিনি গান কবিতায় বাঁচেন। ইদানীং চন্দননগর কলকাতায় সময় ভাগ করে থাকেন।    






রডোডেনড্রন


মেঘের আঁচলে ঢাকা পাহাড়ের মুখ

শীতার্ত রাত্তিরে কাঁপে চৈত্রপবন

নিজস্ব দর্পণে লিখি গোপন অসুখ   

সোনালি বুদ্ধের হাসি : রডোডেনড্রন!


চাঁদের ক্যামেরা 

 

চাঁদের আলোয় বৃষ্টি নেমেছে

আকাশে তারার বন্যা

নব বৈশাখে বাতাস শুনেছে

আমার গোপন কান্না

 

চোখে জল নেই

কানে বাজে গান

ঠোঁটে কবিতাই সম্বল

 

চাওয়া আর পাওয়া

কখনও মেলে কী?

সব সফলতা নিষ্ফল!

 

তবু ভোর আসে

রাত্রিও নামে

শহরে, পাহাড়ে, সাগরে

 

আধখানা চাঁদ

ক্যামেরার ভাঙা

লেন্স হয়ে জাগে শিয়রে ...


কুর্বদ্রূপ*


I live only here, between your eyes and you.  (Elizabeth Bishop)

 

এইখানে বেঁচে আছি তোমার দুচোখে

অথচ উদাসী তুমি নাকি অহংকারী?

বুঝেও বোঝো না কিছু হয়তো আমারই

ভুল স্বপ্ন ভুল প্রেম বেঁধেছে তোমাকে

 

বাঁধন মুক্ত করো ভুলে যেও সব

ঘুমহীন রাতে জাগে একফালি চাঁদ

উতলা শ্রাবণে তাকে কী অভিসম্পাত

দিয়েছে বর্ষণমালা, বিচ্ছেদের স্তব ...

 

অনুদ্‌যাপিত প্রেম ক্রমশ অভ্যেসে

পরিণত হয়ে গেছে, নিরুত্তাপ মন

অথবা দর্শন যাকেকুর্বদ্রূপবলে

তেমনও তো হতে পারে? নয়তো সন্ন্যাসে

অভিরুচি নেই কেন! দুরন্ত যৌবন

গোপন সংরাগ জমে ভরা বাদলে

 

*[বৌদ্ধ ক্ষণবাদী দর্শনে কুর্বদ্রূপতা হলো বিশেষ ক্ষণে বীজের উৎপাদনক্ষমতা।] 


সাক্ষী ফেসবুক 

 

প্রশান্ত দুচোখে তার শ্রাবণের মেঘ

হৃদয়ে হৃদয়ে শুরু আধো পরিচয়

 

রাত্রির বাতাসে জমে ব্যাকুল আবেগ

ঘুমহীন চোখে খুঁজি নিবিড় আশ্রয়

 

কথারা অশেষ আর আমি শুধু বলি

কী-প্যাডের চাপে দ্রুত বার্তা বিনিময়

 

তুমি যেন শোনো আর অধীর অঙ্গুলি

সরল চাপল্যে ভরা নতুন প্রণয়

 

করস্পর্শে মাখা খুশি দ্বিধা লজ্জাতুর

শর্তহীন সমর্পণে একান্ত উন্মুখ

 

প্রথম চোখের দেখা শীতের দুপুর

কাছে এলে দূর থেকে সাক্ষী ফেসবুক। 



শেক্সপিয়রীয়

 

মূর্খ যেমন গল্প বলে

     তেমনই এক জীবন

পরিণামে নিবিড় ফাঁকি

     জেনেও দারুণ মোহ!

 

মোহ ঘনায় শরীর জুড়ে

        চোখের দাবদাহ

আশ্লেষে তার হারিয়ে গিয়েও

       দ্বিধার সাতকাহন...

 

আসলে এই জীবন মানে

         সঞ্চরমান ছায়া

তোমার বাঁচা, আমার মরা

         উদ্‌বেলিত মায়া!

 

মনের দেওয়াল ভাঙলে দেখি

        আমিই আমার ঘাতক

মোহ ছড়ায়, মায়া ঘনায়

         শেক্সপিয়রের নাটক।



বরফ

 

কেমন সহজে মৃত্যুর কথা বলো

কিংবা হারিয়ে যাওয়ার...

 

কথার ভিতরে ঝরে পড়ে দ্বেষ

তীব্র দহন জ্বালাও

 

আমি শুধু শুনি, জমাট বরফ

গলাতে পারে না হাওয়া!


উদাসীন মেঘে তবু

 

কত কী বলার থাকে বলি না কিছুই

অপেক্ষার ঘরে জমে চামেলি জুঁই

 

উতল হাওয়ারা আজও মিলন বিহ্বল

উদাসীন মেঘে তবু বিন্দু বিন্দু জল ...

 

গোপন দহনজ্বালা শান্ত করি তাকে

শীতল রাত্রির ছায়া জড়ায় আমাকে!


-সমীকরণ

 

মুঠোয় করে স্বপ্নের বীজ ছড়িয়ে দিলাম রেলস্টেশনে

আপ-ডাউনে অসংখ্য ট্রেন, ঘুরুক মরুক যে যেখানে

 

তবুও আয়ু সবল হয়ে বাঁচবে ঠিকই একটি-দুটি

স্বাধীনতার বৃক্ষে এখন প্রেমহীনতার পুষ্প ফোটে

 

নানান জ্ঞানে আমরা জ্ঞানী, ভালোবাসাই ব্রাত্য শুধু

চুম্বনে তাই প্রাপ্তি এখন নীরস এবং তিক্ত মধু;

 

মধুর মধুর বংশীধ্বনি শুনতে হলে স্বপ্ন দেখো

গ্রন্থলোকে মগ্ন থেকে কল্পনাজাল বুনতে শেখো

 

যদিও কঠিন স্বপ্ন দেখা, জটিল প্রেমের সমীকরণ

পাঠকৃতি মানেই এখন ভাঙা-গড়া-পুনর্লিখন...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন