শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

এই সংখ্যার কবিঃ কবি শীতল চৌধুরী

 



কবি শীতল চৌধুরী

শীতল চৌধুরী (জন্ম : ১৯৫২সাতের দশকের প্রবীণ কবি। -যাবৎ বাইশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। রয়েছে একটি ‘শ্রেষ্ঠ কবিতাও। মূলত লিটল্‌ ম্যাগাজিনের কবি হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেনতবে পাক্ষিক ‘দেশ’ পত্রিকাতেও একাধিকবার তাঁর কবিতা প্রকাশ পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আগ্রাসী পাঠক। একাধিক একাডেমিক  নন-একাডেমিক প্রবন্ধগ্রন্থও তিনি লিখেছেন  সম্পাদনা করেছেন। রয়েছে বেশ কয়েকটি গল্প  উপন্যাসের বই। ছোটদের জন্য গল্পগ্রন্থ রচনাতেও তিনি সমান দক্ষ। কবিতায় মেধা  মননের বীজ তিনি বুনে দিতে চান। -ব্যাপারে তিনি তাঁর কাব্যগুরু চল্লিশের রবীন্দ্রপুরস্কার-প্রাপ্ত কবি রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীর অনুগামী। প্রেমঈশ্বরচেতনাআধ্যাত্মিকতা এবং সমাজবীক্ষা তাঁর  কবিতার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। উল্লেখযোগ্য কাব্যের মধ্যে রয়েছে : মহাকালের জানালানাচে বীজ কৃষ্ণপ্রেমেসরস্বতীর আঙুলঅক্ষরবৃত্তে   আমিজীবনানন্দ খুলিনি একপাতাআত্মজাউড়ছে শ্লোক বেদব্যাসের ইত্যাদি। আপাতত শেষ প্রকাশিত কাব্য ‘প্রেমিক ফেরিওলা কবিতা  প্রবন্ধ রচনার জন্য পেয়েছেন বেশ কয়েকটি ছোটপত্রিকার সম্মাননা  পুরস্কার যথা : দয়ালকুমার স্মৃতিপিনাকীরঞ্জন স্মৃতিসাধনা সাহিত্য রত্ন ২০১৫সাহিত্য প্রগতি রজত জয়ন্তী সম্মাননা ইত্যাদি। দীর্ঘদিন হুগ্‌লি  চুঁচুড়ায় কাটালেও চন্দননগর সরকারি কলেজের সিনিয়র করণিকের পদ থেকে অবসর নিয়ে  বর্তমানে সপরিবার হাওড়া-নিবাসী।



   

      



 রমেন্দ্রকুমারের নাভি

 

যিনি অহরহ কবিতায় চাঁদ নিয়ে লোফালুফি খেলতেন

যিনি পথে-ঘাটে বেডরুমে খুঁজে বেড়াতেন গুহ্যমন্ত্র

যিনি সব নারীকেই ভাবতেন দুর্মূল্য কোহিনূর

যিনি শব্দ-চাষে যখন তখন তুলে আনতেন ব্রহ্মবীজ

দ্যাখো দ্যাখোসেই রমেন্দ্রকুমারের নাভি কেমন

ভেসে যাচ্ছে হুগ্‌লি নদীর জলে...  

 

দ্যাখো নাভি তো নয়,

যেন এক আশ্চর্য রণ-পা

আলোর শরীর নিয়ে

বেড়াচ্ছেন এই গোলকের

আনাচে-কানাচে হরতন রুইতন

অসংখ্য তরুণ প্রজন্মের ভেতরে

জল মাটি বাতাসের স্বরলিপি হয়ে

চাঁদ, প্রেম, কোহিনূর, ব্রহ্মবীজ নিয়ে

এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষান্তরে!


বোধিসত্ত্ব

 

বহুবিধ রঙ

প্রগাঢ় আলোর

বিস্ময় নিয়ে

আস যাও

আঁধার ভাঙতে ...

কে বোঝে তোমার

মৌন অনুভূতির

নীরব ক্রীড়ার?

বিস্ময় বালক তুমি

হয়তো বা পথিক

জীবন-মৃত্যুর...

ভাঙো গড়ো

নিজেরই বীজে

নিজেরই প্রত্যয়;

কখনও বা

কল্পিত রেখায়

দাও বিশ্বাস

মূর্ত স্বপ্নের!

কী অদ্ভুত

চলনের গতি

কখনও স্থির

কখনও কম্পমান

ভূধরে করো কর্ষণ

প্রচ্ছন্ন সকালের;

হয়তো বা

ছয় সমুদ্র পার

আকাশবাড়ির

শত ছায়াপথ

ভেঙে ভেঙে

মহাদ্রুম বোধিসত্ত্ব

মহাকাল জাতকের! 





স্বপ্নবিপ্লব

 

জ্যোৎস্নার গরদ পরেছে রাত্রি

এখন আমি সব বদলে দেব

গাছ-পাতা, ফুল-ফল

বদলে দেব বৃত্তের ভেতরের

চলাফেরা, মেলট্রেনের বাঁশি

 

এখন শুধুই পরিবর্তন

রাত্রির ভেতরে রাত্রির দরজা

ঘরের ভেতরের ঘর

এখন আর কেউ ভিখারী নয়

সবাই কবি প্রেমিক;

এখন ডানা মেলে উড়বে ফুল

উড়বে মধু কর্পূর বাতাসে

 

জ্যোৎস্নার গরদ পরেছে রাত্রি

এখন শুধুই পরিবর্তন

এখন চোখে চোখে স্বপ্নবিপ্লব

নান্দনিক জামা গায়ে

বাতাসের ঘরে রূপকথার পাখিরা

পরবে ডানা অমল জ্যোৎস্নার

 

একে একে খুলে যাবে

স্বপ্নলোকের সব লাল নীল বেগুনি দরজা!  


বলেছিল পাখি

 

বঞ্চনারও শেষ আছে বলেছিল পাখি

ঘুমের ভেতরে। সেই থেকে ঘুরি সব দ্রোহ

বুকে নিয়ে একাকী লজ্জায়। চাঁদ ওঠে,

সূর্য ওঠে, ফুল ফোটে নির্বিকার শ্লেটে;

হয় না চিত্তে কোনো ঝড়, নির্বিকার এঁকে

রঙ দিই প্রাণের গভীরে। হিংসাকে বলি

দূরে থাক, - তোকে আর প্রয়োজন নেই।

একাই আমি বিশ্বে চলনে বলনে

আনতে পারি নির্বাক শূন্য শস্যক্ষেতে

মৌসুমী ধান। উজাড় করতে পারি

নগ্ন হয়ে অহংকারের অলংকার সব খুলে

নিজেকে বারবার প্রকাশ্যে রাস্তায়

মানুষের মিছিলে। শোকতাপ ভুলে

মৃতমায়ের কোলে বসে পুনরায় হেসে

শাসন করতে পারি একবগ্‌গা অবাধ্য

কালের হার্মাদ ঘোড়াদের!


বসন্তসেনা

 

স্বপ্নের মধ্যে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে যে চিঠি আমি পাঠিয়েছি

প্রত্যাখ্যান  করবে কী করে?

 

কী করে তুমি সীমান্তে বসাবে প্রহরী?

 

চিঠির অক্ষর যে বড় সর্বনাশী...

 

প্রতিটি অক্ষরের ভেতরে রয়েছে যে বসন্তসেনারা!

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন