জানলা
শীত চলে গেল । পুরো শীতকালটা জানলাগুলো বন্ধ থাকে । এবার খুলে দেওয়া দরকার এই ভেবে চিরহরিৎ জানলা কটা একে একে খুলে দিলেন । জীবনের প্রথম দিকে যখন ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তখন জানলার অভাববোধটা খুব তীব্র হয়ে দেখা দিত তাঁদের । একটা জানলা ছিল শোবার ঘরে । কিন্তু রাস্তার দিকে । মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চিরহরিৎ দেখতেন কেউ যেন উঁকি মারছে । বাইরে থেকে কেউ পর্দা তুলে দেখত কাছাকাছি কোন জিনিস আছে কী না । আবার কখনো ভোরের দিকে দেখেছেন । কেউ যেন পর্দা সরিয়ে ভেতরের অবস্থা দেখে নিতে চাইছে । তবে ভোরের উঁকিগুলো বেশির ভাগই অল্পবয়েসিদের । তাদের কৌতূহল হল নারী পুরুষকে যদি ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায় ।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে শীত যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল । পাতলা সোয়েটারগুলো লন্ড্রিব্যাগে দেওয়া হয়ে গেছিল । সেখান থেকে টেনে বের করা হল । সুনীপা বলছিলেন --আজ যা হাওয়া । সকালে হাঁটতে বেরিও না । রুটিনে ছেদ দেবার পক্ষপাতী নন চিরহরিৎ । হাঁটতে গেলেন । পরদিন গলা বসা । কন্ঠস্বর ভেঙে যাচ্ছে । দলা দলা কফ উঠছে । কাশতে গেলেই পাঁজর টনটনিয়ে উঠছে । সুনীপা বললেন--একবার ডাক্তার দত্তকে বুক কর । শুনলেন না চিরহরিৎ ।
বিকেল হতে না হতেই সব জানলা বন্ধ করে দিলেন সুনীপা । চিরহরিৎ ভাঙা গলাতেই বললেন--বন্ধ করছ কেন ? চারতলার ওপর ফ্ল্যাট । এখানে তো কেউ উঁকি দেবার নেই ।
সুনীপা কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন -- উঁকি নিয়ে কে ভাবে এখন ? আমাদের আর খোলা মাঠের হু হু হাওয়া , গাছের পাতা উড়ে এসে বাড়িতে ঢোকা , ছোট পাখিদের খড়কুটো মুখে করে ঘরে ঢুকে যাওয়া এ সবের কোনোই প্রয়োজন নেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন