মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

সুবীর ঘোষ-এর ঝুরোগল্প

জানলা

 

শীত চলে গেল পুরো শীতকালটা জানলাগুলো বন্ধ থাকে এবার খুলে দেওয়া দরকার  এই ভেবে চিরহরিৎ  জানলা কটা একে একে খুলে দিলেন জীবনের প্রথম দিকে যখন ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তখন জানলার অভাববোধটা খুব তীব্র হয়ে দেখা দিত তাঁদের একটা জানলা ছিল শোবার ঘরে   কিন্তু রাস্তার দিকে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চিরহরিৎ  দেখতেন কেউ যেন উঁকি মারছে বাইরে থেকে কেউ পর্দা তুলে দেখত কাছাকাছি কোন জিনিস আছে কী না  আবার কখনো ভোরের দিকে দেখেছেন কেউ যেন পর্দা সরিয়ে ভেতরের অবস্থা দেখে নিতে চাইছে তবে ভোরের উঁকিগুলো বেশির ভাগই অল্পবয়েসিদের তাদের কৌতূহল হল নারী পুরুষকে যদি ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যায়

 

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে শীত যেতে যেতে থমকে দাঁড়াল পাতলা সোয়েটারগুলো লন্ড্রিব্যাগে দেওয়া হয়ে গেছিল সেখান থেকে টেনে বের করা হল সুনীপা বলছিলেন --আজ যা হাওয়া সকালে হাঁটতে বেরিও না রুটিনে ছেদ দেবার পক্ষপাতী নন  চিরহরিৎ  হাঁটতে গেলেন পরদিন  গলা বসা কন্ঠস্বর ভেঙে যাচ্ছে   দলা দলা কফ উঠছে কাশতে গেলেই পাঁজর টনটনিয়ে উঠছে সুনীপা বললেন--একবার ডাক্তার দত্তকে বুক কর শুনলেন না চিরহরিৎ 

 

বিকেল হতে না হতেই সব জানলা বন্ধ করে দিলেন সুনীপা   চিরহরিৎ ভাঙা গলাতেই  বললেন--বন্ধ করছ কেন চারতলার ওপর ফ্ল্যাট এখানে তো কেউ উঁকি দেবার নেই

সুনীপা কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বললেন -- উঁকি নিয়ে কে ভাবে এখন আমাদের আর খোলা মাঠের হু হু হাওয়া ,  গাছের পাতা উড়ে এসে বাড়িতে ঢোকা ছোট পাখিদের খড়কুটো মুখে করে ঘরে ঢুকে যাওয়া সবের কোনোই প্রয়োজন নেই

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন