সাইমন আর্মিটেজের দুটি অনুবাদ কবিতা
১. শহুরে সঙ্
শহরতলির ঘিঞ্জি অপরিসর রাস্তা দিয়ে
বাড়ি ফিরতে গেলে
প্রতি দশ বারের মধ্যে অন্তত তিনবার
তুমি তাকে দেখতে পাবে - শহুরে সং -
ঝুড়িতে রাখা নোংরা জামাকাপড়ের মত
এলোমেলো চেহারা নিয়ে
নেমে এসেছে রাস্তায়,
কখনও গলায় দড়ি বেঁধে
টেনে আনছে একটা কুকুর।
হেসে ফেলো না। চামড়ার প্রতিটি বিন্দু তার
অবিলীয়মান কালিতে চোবানো।
ট্রাফিকের লাল আলো জ্বলে উঠলে
যেই না সে বেরিয়ে আসে রাস্তায়
দেখে শুধু ভাবো তিরিশ বছর পর
তাকে দেখতে কেমন হবে!
বিকৃত মুখ আর ঢুকে যাওয়া তালু!
মলিন, বিষন্ন ট্যাটু আঁকা শরীর জুড়ে তার
সন্তুষ্ট, পরিপাটি জীবনের বাইরে থাকার
সেই সীমাহীন বিরুদ্ধতা!
উইন্ডস্ক্রিনে জেগে ওঠা বিকট মুখাবয়ব দেখে
ভয়ে আঁতকে উঠছে পেছনের সিটের শিশু।
গাড়ির কাচে লেগে থাকা তার রঙিন মস্তিষ্কের দাগ
মনে রেখো।
কারণ
বৃষ্টি হলে ওয়াইপার সেই দাগ ঠিক মুছে দেবে।
২. হোমওয়ার্ক
যখন আবার সন্ধ্যে নামে, ঘনায় আঁধার
গলিতে নেমে আসি আমি।
আর হাতের লাল কলমটা দিয়ে
এঁকে দিই চাঁদের মুখে গোঁফ আর দাড়ি।
আর পাহাড়ের ওপারে থাকা আমার বৃদ্ধ শিক্ষক
চশমাটা খুলে ফেলে নরম কাপড়ে মুছে ফেলেন।
আবার সেটাকে পরে ফেলে অবাক চোখে তাকিয়ে
নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেন না!!
এইমাত্র তিনি যা দেখলেন...
এটাই আমার হোমওয়ার্ক!!
[সাইমন আর্মিটেজ (১৯৬৩-)
সমসাময়িক ব্রিটিশ কবিদের মধ্যে যে কজন কবি নিজস্ব এক কাব্যভাষা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন সাইমন আর্মিটেজ তাদের মধ্যে অন্যতম। ইংল্যান্ডের বর্তমান "পোয়েট লরিয়েট" তিনি। পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সাইমনের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় লিডস ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করছেন। ১৯৬৩ সালে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের হাডার্সফিল্ডের মার্সডেন গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। গ্রাম্য পরিবেশ, গাছপালা, পশুপাখিদের সঙ্গে বড়ো হওয়ার অনুসঙ্গ পরবর্তী সময়ে তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে আসে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন প্রান্তিক মানুষদের জীবন সংগ্রাম। তাঁর কবিতায় বারবার ফিরে আসা নামহীন, গোত্রহীন বা তথাকথিত গুরুত্বহীন মানুষজনের কথা তার শৈশবের স্মৃতির প্রতি একধরনের সংযোগ বললে ভুল বলা হয় না। তাছাড়া সাহিত্যচর্চা তাঁর পারিবারিক সূত্রেও প্রাপ্ত। কবির বাবা পিটার আর্মিটেজ পেশায় একজন দমকল কর্মী হলেও নিজে ছিলেন একজন নাট্যকার। তাঁর একটি নাটকের দলও ছিলো। আর্মিটেজের কবিতা চর্চার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৮ সালে "হিউম্যান জিওগ্রাফি" কাব্য সংকলনটির মাধ্যমে। যদিও পরের বছর প্রকাশিত "জুম!" কাব্যগ্রন্থটি তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। পরবর্তীকালে "কিড" (১৯৯২) এবং "বুক অফ মাচিস" (১৯৯৩) এর মত বই সমসাময়িক ব্রিটিশ কবিদের মধ্যে তাঁর জায়গাটিকে আরো মজবুত করেছে।
আসলে ব্রিটিশ কবিতার কথা বলতে গেলে আমাদের দেশে আলোচনা খুব বেশি হলে ষাটের দশকে গিয়ে থেমে যায়। এই কথা কিন্তু কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে খাটে না। আশির দশক, নব্বই বা বর্তমান শতকের সমসাময়িক ঔপন্যাসিকদের নাম আমরা কমবেশি সবাই জানি। তাদের লেখাও পড়েছি। এর কারণ হয়ত কবিতার পাঠক সংখ্যা কমে যাওয়া। শুনেছি লন্ডনে এখন কবিতার পারফরম্যান্স হয়। কবিরা মঞ্চে উঠে অভিনয়, আবৃত্তির মিশেলে নাচ গান অপেরা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে কবিতা পাঠ করেন। কবিতা খুব বেশি পড়া হয় না বলেই এমন ব্যবস্থা। কবিদের সেই সম্মানও নেই। কাব্যি করা অনেক সময় নঙর্থক পরিসরে দেখার প্রবণতাও হয়েছে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে। তাই ইংরেজি আধুনিক কবিতা বলতে আমরা আজও সেই এলিয়ট, ইয়েটস, অডেন বা খুব বেশি হলে লারকিন, টেড হিউজেস পর্যন্ত এসে দাঁড়াই। যদিও শক্তিশালী সমসাময়িক কবি আছেন অনেক। সাইমন আর্মিতেজ তাদের একজন। এখানে বাংলায় অনূদিত "The Clown Punk" কবিতাটি কবিতাটি তাঁর Tyrannosaurus Rex Versus The Corduroy Kid (২০০৬) বই থেকে নেওয়া আর "Homework" কবিতাটি নেওয়া হয়েছে "The Unaccompanied"(২০১৭) বইটি থেকে। আর্মিতেজের কবিতায় ঝকঝকে শহরের গোপন গভীরে থাকা সেই সব মানুষদের কথা থাকে যারা ভোগবাদী সন্তুষ্ট জীবনের বাইরে জাগা একধরনের চিরকালীন আউটসাইডার। তাদের দেখে আমরা হয় ভয় পাই, ঘৃণা করি অথবা এড়িয়ে যাই। কিন্তু পাশে যাওয়ার চেষ্টা করি না। গোলকায়নের যুগে প্রতিটি অতিরিক্ত সাবলটার্ন তাঁর কবিতায় ফুটে ওঠে বারবার। এছাড়াও চেনা সমাজের পরিচিত রীতিনীতি কে একধরনের মজার ছলে প্রশ্ন করার চেষ্টা তাঁর কবিতায় ফিরে আসে।]
ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন