মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সফিউন্নিসা-র ঝুরোগল্প

মুখোশ

এই শুনছো ! শোনো না ! ’

রাত দুটো। কেমোথেরাপির সপ্তম সাইকেলে টানা ঘণ্টার ইনজেকশনে  ধ্বস্ত শরীর কখন ঘুমের কোলে নেতিয়ে পড়েছিল, নিজেই জানেনা সুলেখা। স্বামী অনিমেষের ধাক্কায় চমকে জেগে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। 

না, মানে, বলছিলাম কি তোমাকে আমি দুএকটা গয়না গড়িয়ে দিয়েছিলাম না? বিয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে গতবছর একটা বালাও দিয়েছিলাম, তাই না?’

হতভম্ব সুলেখা বিষণ্ণ স্বরে বলল, ‘এখনই সেগুলো দরকার তোমার? ডাক্তারবাবু যে আজ বললেন, বাকি কেমোর কোর্স শেষ হয়ে গেলে কয়েকটা রেডিয়েশন নিলে আমার লাইফ স্প্যান বেড়ে যাবে অনেকটা ! হয়ত বেশ কয়েক বছর বেঁচে যেতেও পারি। শুভ কিছু বলেনি তোমায় ? ’

চমকে ওঠে এবার অনিমেষ। আমতা আমতা করে --‘ না, মানেএসব কী বলছ? আমি এমনিই জানতে চাইছিলাম।' পাশ ফিরে শোয় অনিমেষ।

এক টুকরো ম্লান হাসি ফুটে ওঠে সুলেখার মুখে। গত রাতেই ভেঙে পড়েছে তার স্বপ্ন আর সাজানো সংসার। কাল রাত থেকেই সে ভেবে চলেছে জলের ওপর বাসা বেঁধে মেয়েরা কেমন তাকে আঁকড়ে পরম বিশ্বাসে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেয় গোটা জীবন। 

তিনদিন হল সুলেখার কাছে এসেছে তার চেয়ে বারো বছরের ছোট একমাত্র বোন সুতপা। দিদির দুর্দিনে কয়েকটা দিন তাকে সঙ্গ দেবে। গতরাতে তীব্র পিপাসায় ঘুম ভেঙে গেলে আবিষ্কার করে অনিমেষ পাশে নেই।ব্যালকনিতে মৃদু কথোপকথনের শব্দ। ভেজানো দরজাটা একটু খুলতেই যূথবদ্ধ, মিথুন মূর্তি। পুরুষের আকুতি আর নারীর ছদ্ম বাধা। বাতাসের মতো সংলাপ ' আর 'দিন! বড়জোর 'মাস। তারপরে তো তুমিই সব রাইকিশোরী।' নারীকণ্ঠ বেজে ওঠে ' এমন করে বল না। তোমার ছেলে শুভ মানবে! আমার তখন পনেরো। দিদির সঙ্গে শুভদৃষ্টির সময় থেকেই তো...আজও আমি একা কার জন্য জানোনা!' 

দুহাতে কান চেপে কোনও রকমে টলতে টলতে  বিছানায় ফিরে এসেছিল সুলেখা 

নিজেকে কাল থেকে কেমন ভারমুক্ত, বাঁধনহীন মনে হচ্ছে তার।



 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন