ব্যাংক ডাকাতি
বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ কল-লেটার পেয়েছিল অলোকেশ। কোনোটা কলকাতার, কোনোটা চাইবাসার, কোনোটা জলপাইগুড়ির। সব জায়গাতেই ইন্টারভিউ দিতে গেছিল। যাতায়াতের ভাড়া নিজস্ব, খাওয়া ও থাকা ব্যক্তিগত স্পনসর্ড। কিন্তু কোনো অফিস থেকেই সিলেকশন লেটার এসে পৌঁছাল না। এছাড়া বারকয়েক ব্যাংক, এল আই সি, পোস্ট অফিস ও রেলওয়ের বাছাই পরীক্ষাতেও বসেছিল। সেক্ষেত্রেও একই ফলাফল। চাকরি কোথাও জুটল না। অলোকেশ হতাশ হতে হতে মনে মনে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল যে, এ জীবনে তার আর চাকরি করা হলো না।
সেদিন বিকেলে সুশ্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল নন্দন চত্বরে বাংলা একাডেমীর সামনে। অলোকেশ যথাসময়ে পৌঁছে গেছিল। সুশ্রী তখনও আসেনি। অলোকেশ মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশে সমবেত মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিল, এইসব লোকেরা প্রত্যেকেই চাকরি করে? কোথায় চাকরি করে? এত এত চাকরি আছে বাজারে? বাজার শব্দটা মনে আসতেই তার ব্যবসার কথা মনে পড়ল। তাহলে কি এরা অনেকেই ব্যবসা করে? ব্যবসার পুঁজি কোথা থেকে পায়? কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, মানুষ কি জন্মায় শুধু চাকরি আর ব্যবসা করার জন্য? সেটাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? অলোকেশের জীবনের লক্ষ্যও তাই?
সুশ্রী এসে হাত ধরে টানতেই অলোকেশের চিন্তা ভাবনায় ছেদ পড়ল। সুশ্রী বলল, তুমি কিছু একটা কর অলোকেশ। উপার্জনের ব্যবস্থা কর। ঘরে প্রতিদিন বাওয়াল চলছে আমার বিয়ে নিয়ে। দু’তিনটে পাত্রপক্ষ আমাকে দেখে পছন্দ করে গেছে। আমি অবশ্য জানিয়েছি, তোমাকেই বিয়ে করব। কিন্তু তুমি নিজেকে একটু গুছিয়ে না নিলে ঘর থেকে কিছুতেই তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে রাজি হবে না।
অলোকেশ হাসল। সুশ্রী, আমার মনে হচ্ছে, তুমি আমাকে কখনই বিয়ে করতে পারবে না। অনেক চেষ্টা করলাম, চাকরি জোটেনি। আবার ব্যবসা করারও পুঁজি নেই আমার। তুমিই বল এরপর আমি আর কী করতে পারি?
সুশ্রী হঠাৎ অলোকেশকে রীতিমতো চমকে দিয়ে বলল, আমি তোমাকে এ ব্যাপারে একটা প্রস্তাব দিতে পারি। ব্যাপারটা আমি বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি। কিছুটা প্ল্যানও করে রেখেছি। কয়েকজন সহযোগির কথাও ভেবে রেখেছি। এমন কি কাজটা কোথায় করব, সেই জায়গাও ঠিক করেছি। এখন তুমি রাজি হলে কাজে নেমে পড়তে পারি।
অলোকেশ হকচকিয়ে গেল সুশ্রীর কথা বলার ধরন দেখে। বলল, কী প্রস্তাব তোমার? কী করতে বলছ আমাকে?
সুশ্রী বলল, আমরা ব্যাংক ডাকাতি করব।
-মানে?
-অবাক হচ্ছ কেন? এর আগে ব্যাংক ডাকাতির কথা শোনোনি?
-হ্যাঁ, শুনেছি। কিন্তু তুমি ব্যাংক ডাকাতি করবে?
-আমি একা নই, আমরা। একটা দল আমি অর্গানাইজ করছি। মোট পাঁচজনের দল। আমি, তুমি এবং আরও তিনজন। সেই তিনজনের মধ্যে দুজনের এই কাজে আগের অভিজ্ঞতা আছে। তারাই আসল কাজটা করবে। তবে প্ল্যানটা যেহেতু আমার, তাই টিম লিডার থাকব আমি।
- সেকী! এতবড় রিস্ক নেবে! তারপর ধরা পড়লে কী হবে?
সুশ্রী হাসল।
-ভয় নেই। ধরা পড়ব না। কেননা আমরা ব্যাংক ডাকাতি করব না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন