৭।
জীবনের বহুস্বরিক কালখন্ডে সব যেন থরে থরে সাজানো থাকে।অনিমেষ তার এত এত দীর্ঘ জীবন দিয়ে
সম্পর্কের নানান
স্তরগুলিনিয়ে খুব ভাবে।ভাবতেই থাকে।আসলে কোন সম্পর্কই কিন্তু নষ্ট হয় না।প্রতিটি সম্পর্ক আসলে
অর্জন।সব সম্পর্ক
থেকেই ঠিকড়ে বেরিয়ে আসে অদ্ভূত এক আলো,যা সমস্ত জীবনে নিজের মতন করেই থেকে যায়।এই পঞ্চাশে
এসে মাঠ প্রান্তর
শহর শহরতলী দিয়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে আজকাল অনিমেষ তার ফেলে আসা সম্পর্ক গুলি নিজের মতন
সাজাতে সাজাতে
জীবনের মজা ও ম্যাজিকগুলি নির্মাণ ও বিনির্মাণের খাঁজে ঢুকিয়ে দিতে থাকে।তার ঠোঁটে সেসময় চিলতে হাসি
ও নিরিবিলি
খেলা করে।
কত নারী এসেছে অনিমেষের সমস্ত জীবনভর।তার খুব মিঠু দিকে মনে পড়ে,বুড়ি দিকে মনে পড়ে,সোনাদিকে
মনে পড়ে।
কোহিনুর চা-বাগানের বেবী ওড়াও কে মনে পড়ে।জীবনের এক পর্বে এরা ঘিরে ছিল অনিমেষের জীবনকে।
কত কত দিন এরা
কেউ আর এই পৃথিবীতে নেই!কিন্তু অনিমেষের জীবনের গুহাগাত্রে তারা কিন্তু খুব নিবিড় হয়ে রয়েই গেছে।
বাল্যে জটিলার সাথে সখ্যতা জমেছিল।তার বাল্যবান্ধবী ছিল ভজন।খেলার সাথী ছিল গায়েত্রী।সে এক
নদীঘেরা দ্বীপ শহরের
জীবন ছিল।হারিয়ে যাওয়া সেই নারীদের প্রায় ৩০ বছর পরে আবার অনিমেষ খুজে পেয়েছিল,যখন তাকে
চাকরীসূত্রে আবার
ফিরে যেতে হয়েছিল বাল্যের সেই দ্বীপশহরে।
কিন্তু অনিমেষ হারানো নারীদের ফিরে পেয়েও বুঝতে পেরেছিল,হারানো সময় হারানো মানুষ হয়তো ফেরে;
কিন্তু সেই ফেরায়
হারানো কালখন্ড কিছুতেই ঘুরে আসে না!হায়রে জীবন!হায়রে মহাকাল!
৮।
নিভে যাওয়া সিগারেট নুতন করে ধরাতে গিয়ে চোখের কোণ ও কপালের ভাঁজে ঘাম জমে অনিমেষের।সে
নিজেকেই প্রশ্ন করতে
থাকে,নিজেই আবার উত্তর দেয়।
_আচ্ছা,সব সম্পর্ক থেকে কি বেরিয়ে আসা যায়?
_না।একেবারেই না।
_তবে কি সম্পর্ক সুগভীর ফাঁদ?মাকড়সারজাল?
_কিছু সম্পর্ক ভয়ঙ্কররকম মাদক ও মাদকতা জড়ানো।যা থেকে তুমি আর বেরোতেই পারবে না।
‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ গানটির কথা মনে করে দেখো অনিমেষ!
হ্যা।জানে।বোঝে অনিমেষ।প্রায় পঞ্চাশে পৌঁছোবার আগে তাকে তো এমনই একটা উত্তরহীন প্রশ্নের মতন
ভয়াবহ সম্পর্কের
ভেতরে ঢুকে পড়তে হয়েছিল।
আর,সেটাই তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পরাজয়!
ক্রমশ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন