আমি যখন থার্ড ইয়ার তুমি তখন চৌকশ। ক্যাম্পাসে তোমাকে সব্বাই চেনে। তোমার জিন্সের পকেটে টাটকা কবিতা। তুমি সাম্যবাদ, শ্রেণি সংগ্রাম নিয়ে কী সুন্দর প্রবন্ধ লেখো!
দারিদা, এডওয়ার্ড
সাঈদ তোমার
রেফারেন্স। আমি শ্যামলা তোমার অবয়বে মুগ্ধ হই। আনমনে তোমার মতো পৌরষে আমি আমার তামান্না সাজাই।
তুমি ইচ্ছে
করে এলোমেলো
থাকো, মেধাবী
বলে ক্লাসে
ভালো রেজাল্ট
করো। আমি
তোমার সাথে ক্রমশ:
সিঁড়ি বেয়ে
স্বপ্ন দেখতে
শুরু করি।
প্রেম আর
দেহ নিয়ে
প্রথম কন্সট্রাকশন ডিকন্সট্রাকশন থিওরি
তোমার কাছে
সবক পাই। একদিন আচানক
আমার মধ্যবিত্ত পোশাক তোমার
শিল্পিত শরীরের
কামজ ভায়োলিন
সুরে খান
খান হয়ে
যায়। বুদ্ধ
পূর্ণিমার এক
সন্ধ্যায় তোমার
সাথে ফানুস
দেখতে যাবার
মূহূর্তে টের
পাই আমি
শ্যামাঙ্গিনী প্রেগন্যান্ট।
কী জানি
কেমন করে
আমাদের বিয়ে
হয়ে গেল
সৌরভে। আমার
বন্ধুরা বলাবলি
করল আমি
নাকি রাজকপালী, তোমাকে
পেয়েছি। অনন্যা, সুনন্দা, ডিম্পল, মাধবী
ওরা আমাকে
ঈর্ষা করল
পইপই করে। আমি শহরে
গুনগুন করে
গান গাই;
ধীরে চলো হে রাজনন্দিনী,হংস গমনে চলিল রাই...
তুমি হামদ
শোনো না, কীর্তন
শোনো। ইউসুফ
জোলায়খার কাব্য
তোমার কাছে
জোলো লাগে
কিন্তু পদাবলী
শুনে মুগ্ধ
হও। ভাষা, ডায়ালেক্ট নিয়ে তোমার
১৮ পৃষ্ঠার
এক অসাধারণ
প্রবন্ধ আছে।
আশ্চর্য,
কী চৌকশ
তুমি!
সেই তুমি
একদিন কিনা
আমার মায়ের
বরিশালের আঞ্চলিক
টানের উচ্চারণ
নিয়ে খোঁচা
দিলে। একবার
প্রায় সবার
সামনে হেসে
গড়াগড়ি করলে
যে আমার
মা ‘প্রফেসর’কে পরবেসার, ‘প্রথম’কে পেরথম
বলে। আমি
বিষণ্ণতায় ডুবে
যাই, ও
চৌকশ স্বামী।
কোথাও বেড়াতে
যাবার আগে
আমি কতো
মনোযোগ দিয়ে
সাজি, নিজেকে
কেঁচে কেঁচে
সুন্দর করি। প্রমিত করে বাংলা
বলি, কথার
ফাঁকে ফাঁকে
সিরাজুল ইসলাম
চৌধুরী,
হুমায়ুন আজাদ
থেকে রেফারেন্স দিই। তোমার মুগ্ধতা
আমার দিকে
আর স্পর্শ
করে না। এই চৌকশ
তুমি রাহেলা
আপার লো-কাট
ব্লাউজের দিকে
জুলজুল তাকিয়ে
থাকো। তোমাদের
সহকর্মী জরিনা
ওয়াহাবের ফিগার
নিয়ে রসিকতা
করো বন্ধু
আড্ডায়।
আমি একদিন
অক্ষম যন্ত্রণায় হু হু
করে কেঁদে
দিয়েছিলাম যেদিন
তুমি আমাকে
তীব্র শারীরিক আদরে ফিসফিস
করে জরিনা
বলে ডেকেছিলে।
কাল রাতে
ছোট মামা
ফোন করে
জানালেন আমার
ফরেন সার্ভিস
বিসিএসে হয়েছে। কী যে
ভালো লাগল
শুনে। তুমি
একটাবারও কিছু
বললে না, বন্ধ
টেলিভিশনের মতো
গম্ভীর হয়ে
থাকলে। আমি
বারান্দায় দাঁড়িয়ে
একা একা
কাঁদলাম।
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে...
চৌকশ…আমার
পোস্টিং হয়েছে
অটোয়া। কানাডায়
যখন সমস্ত
আকাশ ভেঙ্গে
তুষার পড়বে, বাড়ির
চারপাশের আঙ্গিনা
ভরে যাবে
নরম তুষারে, তুহিনে। আমি জানালার
ধারে দাঁড়িয়ে
কফি মগে
চুমুক করবো, একা।
চৌকশ, তুমি
তখন ঢাকায়। তোমার বালিশের পাশে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে থাকবে তোমার প্রিয় সিগারেট। বালিশের নিচে কনডমের প্যাকেট আর একাকী ছায়া হয়ে থাকবে তুমি ও তোমার বিশ্রি করে শোবার ভঙ্গিমা।
শোনো,আমিও
১ এর
মতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন