চেনা জানা
করোনাকালে মানুষ চেনা হলো কত
কত রকমের মানুষ
কিছুটা জানা হলো নিজেকেও
চেনা ও জানার বিপ্রতীপে এতটা যে
অচেনা ও অজানাও ছিল
চেনা জানা হয়ে গেল তার সাথেও
অন্ধকারে কাটে আমার দিন
অন্ধকারে কাটে আমার রাত
শুধু দিন ও রাতের সন্ধিকালে
জ্বলে ওঠে যে আলো
আলো আমার আলো
সেই আলোয় চেনা হয়ে গেল
কত শত মুখ
মুখোশের আড়ালে মুখ
মুখেরও আড়ালে থাকে
আরও কত যে মুখ
করোনাকালে অনেক মানুষ জানা হলো
নিজেকেও জানা হলো অনেকটা
প্রতিপক্ষ হয়ে নিজের বিরুদ্ধেও
যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো
তুমি আমার হাত ধরেছিলে
তুমি যখন আমার হাত ধরেছিলে আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম
তোমার হাত ধরার কথা আমি একবারও ভাবিনি তখন
আর যখন কুয়াশা নেমে এসেছিল বজ্রগর্ভ মেঘের মতোন
তুমি কোথায় যে হারিয়ে গেছিলে সেই কুয়াশার ভেতর
তবু সুরগুলো বেজেছিল যেমন বাজিয়েছিলে তুমি
যেমন তুমি আমার ডাকনামে ডেকেছিলে অমল অমল
আমি একদিন দেখেছিলাম আমাদের ছেলেবেলার মাঠ
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সারাদিন খেলা করে মাঠের ভেতর
তুমিও তো খেলেছিলে কতদিন সেই মাঠে
আমাদের সেই ছেলেবেলার মাঠে
কতভাবে যে ছুটে আসে মৌসুমী হাওয়া
কতভাবে যে ফুটে ওঠে মিষ্টি ঘাসফুল
এক্কা দোক্কার গুটি তবু হারায় না কখনো কোনোখানে
সাদা দাঁতের কতটা যে কদর সে তো আমি জানি
যেমন তুমি জান লাউডগার কতটা আদর
তবুও সব জল সাজানো হলো না কোন জলের মিনারে
পরবাসী শিবিরে সুষম আহার
তুমি আমার হাত ধরেছিলে তোমার নিজস্ব ব্যঞ্জনায়
তোমার হাত ধরার কথা আমার ভাবা হলো না আজও
ভান না করাই ভালো
বুঝেও না বোঝার ভান না করাই ভালো
এই সমতল এই পাহাড়ি উপত্যকা
দিন কয়েক আগে অঝোরে যে বৃষ্টি হয়েছিল
তাতেই ভরে গেছে সবার কোল
তুমি অবশ্য আলাদা করে বলতেই পারো
তোমার নিরন্তর পর্যটনের কথা
এক নীরবতা থেকে অন্য এক
নীরবতায় পৌঁছে যাওয়ার কথা
খুব কি লেগেছিল কাঁচা চোখের ঘুম
যখন একটা বিশাল নদী বয়ে যাচ্ছিল
আমাদের ভাগীরথী হয়ে
গাছ একা ঘর বাঁধে না কখনও
অনেক গাছ গাছালি নিয়ে তার ভরা সংসার
হয়তো হাত বাড়িয়ে কেউ চেয়েছিল সামান্য আদর
হাসির কথায় মেতে উঠেছিল পাড়া পড়শির মেয়েরা
এমনও তো হয় কিছু না বুঝেও বোঝার ভান করে কেউ কেউ
তবে এখন এই বেলাশেষে যখন ময়দানে বয়ে যাচ্ছে আলো
কিছু গৃহহীন মানুষ গাছতলায় বিছিয়ে নিচ্ছে রাতের বিছানা
আমরা বরং ভাবি সেইসব মানুষের কথা
মেরুদন্ড সোজা রেখে যারা ভাবে শুধু মানুষের কথা
অস্থায়ী আস্তানায়
কোনো ভাবনাই ছিল না আমার আমাকে নিয়ে
যদি না তুমি বলতে আমাকে ভালো না বাসার কথা
আমি তো সেই খর্বকায় সন্ধ্যায় ছিলাম অস্থায়ী আস্তানায়
মাথার কাছে বাগান পায়ের কাছে উঠোন
একটা ছলকানো জল আর একটা হুঁকোর দম
বাহার তো ছিলই কত সোজা আর সাপ্টা
কাটা আঙুলের ছলাকলায় ছিল অনেকটা চিত্রকলা
এমনই তো থাকে এমনই তো থাকার কথা অস্থায়ী আস্তানায়
আমি তো প্রথাগত শৈলীতেই তোমাকে জানিয়েছিলাম ভালোবাসা
যেভাবে একটানা রঙের মতো একটা বাজনা বেজেই যায় সংসারে
প্রতিবেশীদের খোঁজখবর পাশের বাড়ির বোকা মেয়েটার হাল হকিকৎ
একটা গোটানো মাছ ধরার জাল দুটো আলগা কথা কয়েকটা জন্মদিন
ঘরের চৌকাঠে জমা ছিল না জল তাই তুমি রেহাই পেলে
ভালো না বাসার কথা বলে তুমি আমাকেও রেহাই দিলে
এমনও তো দিন ছিল যখন দরোজা বন্ধ অথচ জানালা হুটহাট খোলা
প্রকাশ্য দিবালোকে রাতের জ্যোৎস্নালোকে বাঘবন্দী খেলা
আমি তো নির্ভাবনায় ছিলাম যেমন থাকে অরুণ বরুণ তরুণ
খর্বকায় সন্ধ্যায় অস্থায়ী আস্তানায় যেমন থাকার কথা ছিল তোমারও
ইপ্সিতা আর লবঙ্গলতিকা
নিশানা স্থির রেখে আমি যে তীরটা ছুঁড়েছিলাম
নিশ্চিত ছিলাম তা ভেদ করবে ইপ্সিতার বুক
কিন্তু কী যে হলো আউটস্যুয়িং করে তীরটা
বিদীর্ণ করল লবঙ্গলতিকার বুক
লবঙ্গলতিকা মিষ্টি হেসে বলল
আমি তো অপেক্ষায় ছিলাম তোমারই
এতদিনে তুমি হলে আমার অর্জুন
এভাবেই একদিন অফসাইডে দাঁড়িয়ে
আমি বাইসাইকেল শটে
গোলপোস্টের নেটে জড়িয়ে দিয়েছিলাম আস্ত ফুটবল
গোলটা নাকচ হয়েছিল আর ইপ্সিতার চোখে
খেলেছিল বিচিত্র ঢং
সান্ত্বনার সুরে বলেছিল
ফুটবল গোল পৃথিবীটাও গোল
তুমিও একদিন দেবে আরও কত কত গোল
কথাটা সত্যি হয়েছিল ইপ্সিতা মজা পেয়েছিল
গোলটা ছিল সেমসাইড
কোচের নির্দেশে আমাকে মাঠের বাইরে যেতে হয়েছিল
লবঙ্গলতিকার কথা আমি ভাবিনি কখনও
আমার ভাবনায় ছিল শুধুই ইপ্সিতা
কিন্তু লক্ষ্যভেদ খেলায় খেলার নিয়ম মেনে
গলায় মালা দিয়েছিল লবঙ্গলতিকা
চলে যাবার ভাবনাটা বড়ই সেকেলে
কিছুটা চোখে দেখে চিনে নেওয়া
বাকিটা তো শুধুই মনের অনুমান
কে আর কবে কাকে চিনেছে তাকে গভীরে
আমি ভাবি এই তো বেশ ভালো
কিছুটা চেনা আর বাকিটা অচেনার একত্র যাপন
কিছুটা জানা আর বাকিটা অজানার সরল সমীকরণ
হয়তো কেউ কেউ এভাবেই ভেবে বসে অন্যের ভাবনা
অন্যের বেদনায় রক্তাক্ত হয় তার জানালা
যতটা অন্ধকারে থাকে কারও কামনা বাসনা থাক না
যতটুকু আলো সে আলোতেই দেখা ভালো বাহারী দস্তানা
এতটা আসার কথা ছিল না কারও কারও
তবুও এসেছে যারা তারা আর ফিরে যাবে কেন
এখানেই আজ তাদের মধ্যাহ্নভোজন
বেলা পড়ে এলে নিশিযাপন
গোধূলির আলোয় একবার দেখে নেওয়া মুখের কারুকাজ
কেশবিন্যাসের পাশাপাশি অঙ্গবিন্যাস
পাকা কথা হলে আগামী অগ্রহায়ণেই সহবাস
যারা বলেছিল আর নয় এবার চলে গেলেই বাঁচি
অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি এখনও দীর্ঘ পথ বাকি
সে অসম্পূর্ণতা তো থেকেই যায় কিছু না কিছু সবারই জীবনে
কে আর কবে স্বহস্তে রোপিত চারা থেকে মহীরুহ দেখে যায় বৃন্দাবনে
আসলে চলে যাবার ভাবনাটা বড়ই সেকেলে
একবার চলে গেলে কিছুতেই আর ফেরা যায় না যে বিকেলে
বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনসব কবিতাগুলোই স্পর্শ করলো۔👌👌👌👌👌۔ নীতা বিশ্বাস ۔
উত্তরমুছুন