৩।
একা একা হাঁটতে হাঁটতে অনিমেষ কেমন দূরাগত হয়।স্মৃতির গোপন কুঠুরি থেকে গত জন্মের রহস্যময়
বাতাস তাকে জাপটে
ধরে।কিছুই তখন আর করার থাকে না।সে দেখতে পারে গোলক গঞ্জের কলেজ মাঠে জুলুস। রংবেরঙের
মানুষের ভিড়।মাইকে
বাজতে থাকা গোয়ালপাড়া অঞ্চলের গান।কি এক আগ্রহে সে ক্রমে ঢুকে পড়তে থাকে সেই জমায়েতের ভিতরে।
সে ছিল ভোটের সভা।ইয়াকুব গিদাল এবারো ভোটের ক্যান্ডিডেট।দুই দুইবারের বিজয়ী এম এল এ
তিনি।লোকগানের লোক।গান লেখেন।দোতারা বাজিয়ে গান গান।আর মরুচমতি শিল্পী সমাজের মহিন
মাস্টারের সাথে ঘুরে
বেড়ান জনপদের পর জনপদ।ইয়াকুব গীদাল কেন জানি না কখনো ইয়াকুব এমেলে হতে পারলেন না।
কোনো ভোটেই তাকে ভোট চাইতে হয় না।তার কোন ভোট প্রচার নেই।তিনি কেবল জুলুসের পর জুলুস গানে
গানে ভরিয়ে
দেন।মানুষ গান শুনতে শুনতে মাতোয়ারা হয়।আবার নেচেও ওঠে দু চার পাক।
কোন জুলুসের জনমানুষেরা তাদের ভেতর ফাউ হিসেবে পেয়ে যায় আব্দুল জব্বার কিংবা কেরামত আলীকে।
বাতাসে গান
ভাসতে ভাসতে চলে যায় গঙ্গাধরের দিকে,মুন্সী বাড়ির বাহির খোলা নের দিকে_
"চাষার মুখত আর নাইরে সেই গান
বড় সাধের বাপ কা লা নি আমার ভাওয়াইয়া ভাসান"।
অনিমেষের মুখ জুড়ে নেমে আসতে থাকে এক লুপ্ত পৃথিবীর নাশপাতি গন্ধ।
৪।
হায়রে মানুষের জীবন!জন্ম মরন শাসিত এই জীবনের বড় মায়া গো!ফেলে আসা এক পৃথিবীতে কোন এক
গ্রাম্য মেলায়
চন্দ্রকান্ত মন্ডল অনিমেষকে এই কথা বলেছিল।প্রায় চার কুড়ির সুঠাম বৃদ্ধ গদাধর নদীতে মাছ ধরে আর
গৌরীপুরের হাট এর
পাইকারদের কাছে সেসব বেচে।
অনিমেষ তখন গৌরীপুরের লালজি রাজার হাতিক্যাম্পের ওপর কাজ করবার জন্য প্রায়ই গৌরীপুর আসে
আর লালজির জিপে
চড়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।আর সময় পেলেই চন্দ্রকান্ত মণ্ডলের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে।পুরনো দিন
আর ইতিহাসের গল্প
শুনতে শুনতে বুদ হয়ে ওঠে।
সে এক অন্যরকম জীবন ছিল অনিমেষের।
ক্রমশ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন