শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

কাজল সেন-এর ঝুরোগল্প


আত্মহনন

মুক্তিরাম অবশেষে আত্মহননের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো। তার সমস্যা অজস্র। সংকট ভয়াবহ। কোনোভাবেই সে তার জটিল সমস্যার জাল কেটে বেরিয়ে  আসতে পারছিল না, বরং আরও জড়িয়ে যাচ্ছিল। আর বিভিন্ন সংকট তাকে এমনভাবে ঘিরে ধরেছিল, যার মোকাবিলা করার সাধ্য তার ছিল না।

স্ত্রী অহল্যার সঙ্গে মুক্তিরামের যোগাযোগ যে কতদিন নেই, তা হিসেব করতে গেলে গন্ডগোল হয়ে যায় মুক্তিরামের। বারোবছর? নাকি চোদ্দবছর? অথবা ষোলবছর? সেই যে কোলের মেয়েটাকে নিয়ে মুক্তিরামের ভায়ের সঙ্গে পালিয়ে গেল, তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। মুক্তিরাম অনেক খোঁজ করেছিল। পুলিশে ডায়েরি করেছিল। কিন্তু হদিশ পাওয়া যায়নি।

মেয়ের কথা প্রায়ই মনে পড়ে মুক্তিরামের। কতটুকু ছিল মেয়েটা! এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছে! ভাবতে কষ্ট লাগে, দেখা হলেও মেয়েটা তার বাপকে চিনতে পারবে না।

এদিকে সে যে সরকারী অফিসে কাজ করে, সেখানে তার বোকামির জন্যই হোক অথবা অতি চালাকির জন্য ফেঁসে গেছে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতিতে। একেবারে চাকরি নিয়ে টানাটানি। অফিসের কলিগরা এখন তাকে সন্দেহের চোখে দেখে, এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। অন্যদিকে যাদের সঙ্গদোষে তার এই দুর্দশা, তারা তাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিতেই থাকে, আরে দেখিস, কিছুই হবে না। ঠিক পার পেয়ে যাবি। সরকারী চাকরি কারও যায় নাকি! এতই সহজ!

মুক্তিরাম নিজেও জানে, শাস্তি হয়তো তার হবে, কিন্তু চাকরিটা থাকবে। আপাতত তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শুনেছেএকটা বেশ মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও তাকে দিতে হবে। তবে যেহেতু সে তদন্তকারী দলের কাছে নিজের ভুল দোষ স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে, তাই সম্ভবত তাকে চাকরি থেকে টার্মিনেট করা হবে না।

চাকরিটা চলে গেলে মুক্তিরাম অথৈ জলে পড়বে। যেটুকু সঞ্চয় আছে, তাতে আপাতত তার দিনের রাতের খাওয়াটা জুটে যাবে ঠিকই। কিন্তু আরও যে দুটো মোক্ষম নেশায় সে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তা বজায় রাখা কিছুতেই সম্ভব  হবে না। আর ঐদুটো নেশা ছাড়া সে থাকতেই পারবে না। একটা মদের নেশা, আর একটা মেয়েমানুষের নেশা। তবে দুটো নেশাই সে করে একান্ত গোপনে। মদ নিজের ঘরে বসেই খায় আর মেয়েমানুষের জন্য যায় বেশ্যাপল্লী। পাড়া প্রতিবেশী কিছু জানতেও পারে না এবং মুক্তিরামও কাউকে বিরক্ত করে না।

কিন্তু তার জীবনে অনেক অঘটনের মধ্যে মারাত্মক অঘটনটা ঘটে গেল একটা নতুন বেশ্যাপল্লীতে গিয়ে। সেই পল্লীতে একদিন আচমকা দেখা হয়ে গেল অহল্যার সঙ্গে। মুক্তিরাম অবাক হয়ে দেখছিল অহল্যাকে। অহল্যাও হয়তো অবাক হয়েছিল। মুক্তিরাম জানতে চেয়েছিল মেয়ের কথা। অহল্যা জানিয়েছিল, মেয়েও এই পল্লীতেই থাকে এবং একই ব্যবসায়।

মুক্তিরামের আত্মহননের সিদ্ধান্ত একেবারেই পাকা। শুধু দিনটা এখনও বেছে নেওয়া হয়নি। এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আত্মহনন কীভাবে? গলায়  দড়ি দেওয়া, বিষ অথবা অতিরক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়া, হাতের শিরা কাটাশরীরে আগুন লাগানো, পুল থেকে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া, রেললাইনে মাথা  দেওয়া? কোনটা ঠিক হবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন