মানুষ, ঈশ্বর ও নুড়ি-পাথরদের গল্প
লোকটার ঘাড়টা প্রায় ভেঙ্গে গেছিল। তবুও মরীয়া। সে ঈশ্বরের দর্শনলাভ করিবে! সাহস করে লোকটা পৌঁছে গেল ঈশ্বরের ঘরে। বন্ধ গেট, গ্রীলের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বর বসে আছে সম্ভ্রান্ত সিংহাসনে।
ঈশ্বর থাকেন পাঁচিলঘেরা সুরক্ষিত অট্টালিকায়। তার সামনে ডিজিটাল যুগ, একের পর এক ভেসে আসছে উজ্জ্বল গ্যাসবেলুনের হিলিয়াম প্রগতি, যুদ্ধ-ক্লান্ত শহর, উড়ন্ত শকুন আর বুভুক্ষু মানুষ!
বাউন্ডুলে লোকটা অট্টালিকার বাইরে দাঁড়িয়ে। নাছোড়বান্দার মতো ঈশ্বরকে ডাকছে, অথচ মহামান্যের কানে কিচ্ছু যাচ্ছে না।
সৌখীন সোফায় বসা ঈশ্বর কেন নির্বিকার? দূর দূরান্তের সমস্ত কিছুই তিনি দেখছেন, অথচ ঘরের সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছেন না!
অতঃপর করজোরে প্রার্থণা, ধ্যান, ডাকাডাকি! জীবনে মাত্র একবার – তার যে ঈশ্বরকে অনেক কথা বলবার আছে!
তার কথা একটা কাগজ আর পাথরে পেঁচিয়ে চিঠিটাকে ভেতরে ছুঁড়ে মারবে কি? ঈশ্বরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে? একথা ভেবেই বাউন্ডুলেটা রাস্তা থেকে একটা নুড়িপাথর তুলে নিল।
হাতের মুঠোয় আটকে থাকা রাস্তার নুড়িপাথরটা তখনই কথা বলে উঠলো- ‘হে পথের-মানুষ! কি চাও? ভেবে নিতে পারো আমরাই তোমাদের ঈশ্বর!’
লোকটা দেখলো, তার হাতের নুড়িটার আওয়াজে রাস্তায় পড়ে থাকা অন্য নুড়িপাথরগুলো নড়েচড়ে উঠলো।
কি বলছে রাস্তার ধূলোমাখা নুড়ি-পাথরগুলো? ওই পাথরগুলো কি সত্যি সত্যিই ঈশ্বর?
‘অট্টালিকার অলস কল্পনা ছেড়ে সবাই বেরিয়ে এসো!’- পাথরগুলো সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো! একটা অনুনাদ তৈরী হলো। সেই তীব্র অনুনাদে কেঁপে উঠলো পৃথিবী! চারদিক থেকে বেরিয়ে এক দঙ্গল মানুষ। হাজারে হাজারে লাখে লাখে মানুষ- অদ্ভুতূড়ে কান্ড!
মুহূর্তেই সবাই এসে ঘিরে ফেললো ঈশ্বরের সুরক্ষিত আবাসটা!
ধীরে ধীরে ভীড় বাড়ছিল। রাস্তায় উপস্থিত সেই সব মানুষগুলো প্রত্যেকেই দাবী করলো, তারাও এসময়ের এক একজন ঈশ্বর!
পরদিন খবরকাগজ লিখলো, নুড়িপাথরদের দ্বারা মন্ত্রীর গ্রীষ্মকালীন-নিবাস আক্রান্ত!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন