সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

যশোধরা রায়চৌধুরী-র কবিতা

কর্মশালা

বেবাক, বিস্বাদ, বিষণ্ণ এক কর্মশালায় বসে আছ। দুদিকে দেওয়াল। মাথার ওপরে স্কাইলাইট। চুঁইয়ে আসা অল্প আলো। তারই ভেতরে লোহার গন্ধ। তামার গন্ধ। কল ওঠা বাসনের গন্ধ। কত অন্ধকার, অন্ধত্ব। কত না তুমুল হৃষ্ট পেতলের ঘটিবাটির ঢং। 

 

আনন্দিত থাকার চেষ্টা করি। প্রতিমুহূর্ত ছিটকে যাচ্ছে মন, যেন আলোর ফুলকি হয়ে যাচ্ছে ঝালাইয়ের যন্তরের আগুন। 

 

দৃষ্টি ঘোলাটে হলে, পাথরের অন্ধকার ভার সহ্য হয়ে যাবে , ভেবে, ঘোলাটে হতেই দিলাম। তবু আলো,

পথভ্রষ্ট আলো, চুঁইয়ে আসা আলো, আজো টানে।

 

এই সব উচাটন ঢং, খং, ধাতব আওয়াজে কান বুজে এল বুঝিবা। 

 

পাথরের চ্যাটালো হাতের তালু থেকে গড়ানো জল চেটে খাচ্ছ। গলা শুকিয়ে আসছে। তবু থামতে পারছ না।

হাতুড়ির মধ্যে ভার, যেন মেয়েদের অসম্ভব ভারি হয়ে যাওয়া কোমর। উঠছে না পড়ছে না , থম মেরে আছে। 

 

একদা নিখুঁত হাতে মালার ফাঁশ , ছোট্ট গিঁট, এমনকি সূক্ষ্ম মোচড়, সম্ভব ছিল। যেভাবে পায়ের বুড়ো

আঙুল দিয়েও একদা চমৎকার মাটিতে বালিতে এঁকে ফেলতে চতুষ্কোণ, বৃত্ত। 

 

হাত পায়ের পুনর্জাগরণের জন্য আলো দরকার। স্কাইলাইটের ফুটোয় গড়িয়ে আসছে ধুলো ওড়া

আলো। তাই জমিয়ে জমিয়ে রাখছ কাচের বিকারে। 

আশা রাখছ। আশা হারাচ্ছ না। সব উপাদান জড়ো করছ। তা দিয়ে

একদিন পরিপূর্ণ নিটোল মন্ত্রোপম ঘড়া, কিম্বা টিকটিক চলা সূক্ষ্ম ঘড়ি গড়তে শিখে যাব, তবু?

 

 


 

1 টি মন্তব্য: