প্রথম পাড়ি গরুর গাড়ি
ইচ্ছে না থাকলেও স্তুতি, হর্ষ ও নতুন বৌ প্রসন্ন চিত্তে জলকেলি ছেড়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে এল। গাড়ি জুড়ে আবার যাত্রা শুরু নদী পার করে বালুকাবেলার গুলে-গুলে (গরুর গাড়ির চলার রাস্তা যা স্পষ্টভাবে বালিয়াড়িতে চিহ্নিত)। দীর্ঘদিন চলতে চলতে বালিয়াড়িতে একটা ইংরেজির ‘V’-এর মতো আকার নিয়ে নেয় আর ঠিক মধ্যিখানে ভেজা বালির যে স্তর থাকে তা অপেক্ষাকৃত শক্ত থাকার ফলে সেটি আর ভাঙ্গে না, টিকে থাকে ফলে একটা স্থায়ী ট্র্যাক তৈরি হয়ে যায়, যেটা চলতি ভাষায় বলে ‘গুল’ । তবে নদীর বালি ভেঙ্গে গাড়ি পারাপার করলে বোঝা যায়, এই পুরু বালির আস্তরন পার হতে গরুদের কত অশ্বশক্তি ( horse power ) ব্যয় করতে হয়। আর এই ব্যাপারটা আমার জানা ছিল বলেই আমি আর সঙ্গে হর্ষ নদী পার হবার সময় গাড়িতে উঠিনি। এমনকি মতিদাকেও নামতে বললাম। মতিদাও গাড়িটাকে ‘অটো’ বা ‘ক্রুইজ’ মোড-এ দিয়ে নেমে এসে আমাদের মতো পদাতিক হলো। গাড়ি চলল নিজের খেয়ালে। সাধারণত; এলিভেটরে প্যাসেঞ্জার নিয়ন্ত্রণবাণীতে কতজন সর্বোচ্চ সংখ্যায় যেতে পারে, সেখানে ৬৮ কেজি গড়পড়তা হিসেবে দেখানো থাকে, মানে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে একটা মানক। সেই হিসেবে তিন জনের দাঁড়াচ্ছে ৬৮ x ৩ = ২০৪, মানে ঐ নদীপথটুকু আমরা বলদযুগলের ঘাড় থেকে ২ কুইন্টল বোঝা কমাতে পেরেছিলাম। এটা ভেবেই নিজেদেরই অনেক ভারমুক্ত লাগল। তাও নদীর ঐ বালিয়াড়ি ভূমি পার হতে কুড়ি মিনিট সময় লাগল গাড়ির নিজস্ব ছন্দে।
আবার বালিয়াড়ি ছেড়ে নিরেট শক্তভূমি, মানে গরুদের শ্রম লাঘব। সামনেই এক মস্ত আমবাগানের ভিতর দিয়ে আমাদের গাড়ির চলার রাস্তা। হঠাত পেছন থেকে স্তুতির চিৎকার- ‘দাদা, আমবাগানে অনেক বাঁদর’। ভাইকে নিয়ে শিজ্ঞির গাড়িতে ওঠ’। ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। হাত নেড়ে উদ্বিগ্ন দিদির উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে জানালো- ‘চিন্তা করিস না, দাদার সঙ্গে ওদের বন্ধুত্ব আছে, কিছু বলবে না।‘ হর্ষ-র এই সরস উক্তি দিদির সতর্ক বাণীতে জলঢালা হয়ে গেল। ‘পুরা পাণি ফের দিয়া’। আমিও হাত নাড়লাম। কৈশোরে গ্রামে থাকাকালীন, একটা লম্বা সময় ধরে, আমি ঐ মুখপোড়াদের খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনেক কিছু জেনেছি, এমনকি ওদের ‘ব্যবহারিক’ আচরণ সম্বন্ধেও সম্যক জ্ঞানলাভ করেছি। ওদের IQ লেভেলটা মানুষের সঙ্গে যথেষ্ট মিল। তাই এদেরকে নিয়ে আমার কৌতূহলের অন্ত ছিলনা। ওদের জীবনযাত্রা নিয়েও।
আমাদের গাড়ি আমবাগানের ভিতর দিয়ে যে ‘গুল’ সেখান বরাবর যাচ্ছে। গোটা আমবাগানটাই হনুদের দখলে চলে গেছে। সপরিবার বিস্তারে। গাছের ডালে নানা সাইজের হনুমান নিজের নিজের সুবিধেমতো জায়গা কায়েম করে বসে বসে আমপাতা চিবুচ্ছে। খুব প্রিয় খাদ্য ওদের। এক জায়গায় থির হয়ে বসে নেই কেউ, শুধুমাত্র বীর হনুমান (দলের পান্ডা) ছাড়া। তার অবস্থান সবচেয়ে দীর্ঘ গাছটির মগডালে। এই দলটির অবিসংবাদিত নেতা বা একচ্ছত্র সর্দার। সাধারণতঃ দেখা যায়, এই হনুমানের দলগুলি হয় নারী-প্রধান। একজনই শুধু পুরুষ বানর থাকবে বাকি সব সদস্যই অনিবার্যভাবে স্ত্রী-বানর ( নবাবদের ‘হারেম’ প্রথা ?)। এই গোটা দলটি ভ্রাম্যমান একটি দল। ১৫-২০ জনের মত একেকটি দল। তাদের নির্দিষ্ট এরিয়া ভাগ করা থাকে। এই এরিয়ার বাইরে ওরা যায় না। গেলেই যুদ্ধ অনিবার্য। মজার ব্যাপার হলো, এই দলের কোনো স্ত্রী বানরের বাচ্চা প্রসব করলে তা যদি বানরী হয় তাহলে ঠিক আছে, কিন্তু ‘বানর’ মানে মাদা-বাচ্চা হলেই সর্দারের হাত থেকে তার নিস্তার নেই, তার মৃত্যু নিশ্চিত।
সাধারণতঃ এই হনুমানের দলগুলি ১৫-২০ জনের দল হয়। একজন মাত্র পুরুষ বানর- বীর হনুমান। তার হাতেই পুরো শাসনভার। একচ্ছত্র অধিপতি। দলের বাকি সব সদস্য স্ত্রী-বানর। তাদের সবার উপর একচ্ছত্র অধিকার এই বীর পুঙ্গবের। গোটা দলের প্রশাসন তার হাতে। সেই অর্থে অধিনায়ক বা আরো সূক্ষভাবে একনায়ক। বানর-সমাজের ঘরানা নর-সমাজের বিপরীত- অর্থাৎ মেয়ে সন্তান স্বাগতম আর পুত্র সন্তান হলেই তার কপালে দুঃখ; প্রসবরত স্ত্রী-বানরের উপর কড়া নজর রাখেন সর্বাধিনায়ক কংস রাজার মতো। পুত্র সন্তান জন্মাবার সঙ্গে সঙ্গে বানরীর কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গাছের উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে তাকে মেরে ফেলেন দলপতি। এই নিষ্ঠুর নিদানের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার লালসা ও হারেম-মানসিকতা। কারণ পুরুষ বানরশিশুটিকে যদি বাঁচতে দেওয়া হয়, তাহলে সে একদিন বড় হয়ে তাকে পরাস্ত করে দলপতি হয়ে বসবে। সুতরাং ক্ষমতা হারাবার ভয় তাকে তাড়না করে বেড়ায়। ভাবলে বিস্ময় বোধ হয়, এই মনুষ্যেতর প্রাণীদের মধ্যেও এমন রাজনীতি কাজ করে! বেঁচে থাকার রাজনীতি, ক্ষমতালোভের রাজনীতি, ভোগসর্বস্ব রাজনীত এদের সমাজেও ! এইসব নিজের চোখে দেখা। অনেকদিন ধরে খুব কাছের থেকে পর্যবেক্ষণে এই তথ্য আহরিত। আবার তাদের বাস্তববোধ বা বিচক্ষণতা এতটাই প্রবল যে যখন সে বুঝতে পারে, তার ইন্দ্রিয়শক্তির অনুভূতি দিয়ে যে তার শারীরিক সক্ষমতা ক্ষীয়মান, নিম্নগামী, তখন থেকে সে শ্যেন নজর রাখে তার হারেমে। এইবারও তার নজর পুত্র-সন্তানের জন্মের খবরে, তবে এইবার মেরে-ফেলা নয়, তাকে পরম যত্নে বাঁচিয়ে রাখাই তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। লক্ষ করেছি, দলপতি তখন সদা-সর্বদা সেই পুত্র-সন্তানের জন্মদাত্রী বানরটির পাশাপাশি তাকে আগলে রাখছে। অদ্ভুব্যঞ্জনত ব্যাপার, সেই সদ্যোজাত একমাত্র যুবরাজ বানরটিএই যে হয়ে ওঠে তার নয়নের মণি। চোখে হারায় থাকে। সে তখন ‘মগডাল’ ভুলে যায়। আর এই যে ‘মগডাল’ নীতিও’ তো ঐ একই কারণে। সে ঐ চূড়ায় বসে নিরন্তর নজরে রাখত হামলাকারী বানর দলের গতবিধির উপর। বীর হনুমানের এক ব্যক্তিত্বব্যঞ্জক চেহারা। এমনকি ঘটনাচক্রে যখনই ‘দলপতি’-র মুখোমুখি হয়েছি, রীতিমতো সম্ভ্রম জাগানো। চেহারাও অনেক বড়সড়, সুঠাম। বোঝাই যায় অসীম শক্তির অধিকারী। কিন্তু ওর চোখমুখ দেখলেই বোজা যেত ‘তখত-ও-তাজ’ ধরে রাখার চাপ তাকে সুস্থির হতে দিত না। তার প্রমীলা-বাহিনীর সদস্যাবৃন্দ বেশ একটা ‘রিলাক্সড’ মুডে ঘোরাফেরা করত, কিন্তু রাজার তো সে সব সাজে না। আবার তার এই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তাও দেখেছি। আরেকটি বানর দল আছে এই অঞ্চলেই, যাদের ‘সন্যাস’ দল বলে চিনতাম- তাদের দল আবার স্ত্রী-বর্জিত; সবাই পুরুষ। ফলতঃ নিতান্তই জৈবিক তাড়নায় তাদের দলের নজর থাকত আমাদের গ্রামের এই স্ত্রী-সর্বস্ব দলটির উপর। আর তজ্জনিত বহিরাগত হামলা। তখন এক ধুন্ধুমার কান্ড লেগে যেত। যে বাগানে বিচরণ কালীন এই অতর্কিত হামলা, সেই বাগান মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা পেয়ে যেত। তারা এতজন বীর বানর আর তাদের সঙ্গে একাই মোকাবিলা আমাদের দলপতির। ওহ্ ! সে কি ভয়ানক লড়াই। তারা তিন-চারজন মিলে আমাদের বীর হনুমানকে গাছের ডালে ঘিরে ধরে আক্রমণ চালাচ্ছে আর গোটা বাগান তখন থরহরি কম্পমান। হাড়-হিম করা লড়াই, অস্তিত্বের লড়াই, দলরক্ষার লড়াই। শক্তি-গতি-আত্মবিশ্বাস, সত্যিকারের পুরুষাকারের লড়াই। চেহারা এবং শারীরিক ক্ষমতার বিচারে আমাদের বীর হনুমানটির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিলনা, এবং আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে এই যুদ্ধে জয়ী হল আমাদের বীর হনুমানটির। সত্যি কথা বলতে কি, যদিও এই লড়াইয়ের ফলাফলের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, তথাপি কেন জানিনা সেদিন অকুস্থলে হাজির আমরা সবাই আমাদের পরিচিত বীর-হনুমানটিকেই বিপুল সমর্থন জানিয়েছিলাম গলা ফাটিয়ে, এমনকি বিপক্ষদলের দলপতিকে লক্ষ করে বেশ কিছু ঢিল ছুঁড়েছিলাম, গুলতি শিকদলও চালিয়েছিলাম। জানিনা, আমাদের এই সমর্থন তার জয়ে কোনোরকম সাহায্য করেছিল কি না। তবে তার জয়ে আমরা অকারণ আনন্দে ভেসেছিলাম, পক্ষপাতিত্ব করেছিলাম সচেতনভাবেই। শএকে কি সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট বলা যেতে পারে ?
ক্রমশ বেলা বাড়ছে, রোদের তীব্রতাও। চারিদিকে কাঠফাটা রোদ। ঘন সবুজ মাঠে গরুর পাল শ্রেণীবদ্ধ মিছিলে নেমে যাচ্ছে বিলম্বিত লয়ে। এক শান্ত নিসর্গ আমাদের চোখের সামনে ঘুমিয়ে রয়েছে। থরে থরে সাজানো বর্ষা-সিঞ্চিত সবুজ ঘাসের জাজিম। ঘাসের ঠাসবুনটে নাম-না-জানা কীট-পতঙ্গের জাতীয় সম্মেলন। দোয়েল-ছাতার-টুনটুনি-ময়না-শালিখের দল মনের আনন্দে মহাভোজে ব্যস্ত। তাদের সম্মিলিত কলতানে চারিদিক মুখর। গাড়ির চাকার আওয়াজে কাঠবিড়ালির দল ত্রস্ত পায়ে তরতর গাছে উঠে পড়ে শাখা নিবিষ্ট হয়ে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে আমাদের গতিপথের উপর নজর রাখতে লাগল আর ‘কিড়িক কিড়িক’ বোলে সতীর্থদের সজাগ থাকতে বলছিল বোধহয়। এ আবার কারা, আমাদের নিশ্চিন্ত শান্তির সাম্রাজ্যে ? চারিদিকে এত প্রশান্তির বাতাবরণ যে মনে হতে লাগল ‘Tresspassers are not allowed’ গোছের একটা নোটিস প্রতিটি প্রশাখায় যেন অদৃশ্যভাবে ঝুলছে।
এখন বেলা বারোটা। সূর্য মধ্যগগনে। আমাদের সামনে একটি জনপদ জেগে উঠল। গ্রাম- আম্বা। ছোট্ট গ্রাম। আধুনিক জীবনের কোনো ছাপই প্রায় নেই এখানে। সহজ-সরল, অত্যন্ত আটপৌরে পোষাকে রাস্তার ধারে সব মানুষজন। দেখলেই বোঝা যায়। গাছ-গাছালির স্নিগ্ধ নিবিড় ছায়ায় সময়বিহীন বিরাম-বিলাস। ‘শ্যামকান্তিময়ী’ কেউ না থাকুক, স্বপ্নমায়ার বিহ্বলতা নিশ্চিতভাবেই কেউ তাড়া করে না। একদিন-প্রতিদিনে তাদের যাপন মগ্ন হয়ে থাকে। তাদের আয়ত্ব সীমার মধ্যেই তাদের নিশ্চিন্ত বাস। এই গ্রামের তন্ময়তা ছাড়িয়ে আমরা এগিয়ে চললাম মতিদার ইটিনিরারির পরবর্তী জনপদ- সটকি-র দিকে। স্তুতি, আমি নিশ্চিত, এই ভাবেই গুণছে – আর মাত্র দুটো গ্রাম বাকি। এই নামে অবশ্য আরো একটি গ্রাম আছে। সেখানে আবার মায়ের মামাবাড়ি। এই দুটি গ্রামের নামে যাতে বিভ্রান্ত না হয় কেউ, তাই মনে রাখার এক সহজ সূত্র আছে। সামান্য দূরত্বের মধ্যে অবস্থান এই পাশাপাশি দুটো গ্রাম থাকায়, এই সটকি গ্রামকে বলা হয় ‘আম্বা-সটকি’, কখনো শুধু ‘সটকি’ বলে উল্লেখ করা হয়না। যেমন- ‘তোর বাড়ি কোথায়’- প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়- ‘আম্বা-সটকি’। আবার তেমনি মায়ের মামাবাড়িতে যাদের গ্রাম তারা বলে- ‘কুঞ্জড়া-সটকি’।
শীঘ্রই আমরা পাশাপাশি ছোট্ট গ্রাম ‘আম্বা-সটকি’ পেরিয়ে এলাম। এরপর পরম আগ্রহে স্তুতি তাকিয়ে রয়েছে বাইরে, কখন শাল নদী আসবে। মতিদা জানালো, আমরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শাল নদী পেয়ে যাব। ক্রমশ নদী-আসন্ন চিহ্নগুলির প্রিলিউড গুলি আসতে লাগল। দূর থেকে সারিবদ্ধ বনানীর শ্রেণী, একটা উঁচু ঢিবি, যা সম্ভবত নদীর বাঁধ, নজরে পড়ল। মাটীতে বালির আভাস। হালকা বাঁধ পেরোতেই নজরে এল বিস্তীর্ণ বালুচর। এদিকের নদীগুলির মতো- জলের বাহুল্য নেই বললেই চলে। হিংলোর সঙ্গে অনেকটাই মিল। একপাশ বেয়ে তিরতির জলের ধারা বয়ে চলেছে আপন মনে। গাড়ির আরোহীদের মধ্যে এক চঞ্চলতা লক্ষ করা গেল। নদীর এই পাড়ে শান্তছায়াবিশিষ্ট গাছেদের সারি আমাদের যেন নীরব আবাহনে ডাকছে কাছে। মতিদা ঘোষণা করল- ‘লদী এসে গেইছে। ঝপ করে চান-টান সেরে লাও সব; তা বাদে বাগাঞ চপে-মুড়িতে শেনে (মাখিয়ে) খেঁয়ে লাও দিখি। আমারো সাঙ্গিন (চরম) খিদে লেগে গেইছে। যাই, গরুগুলাকে দু-আঁটি খড় নামাঞ দিঁয়ে, আম্মো ঝপ করে লদীতে ডুব দিঁয়ে আসিগা।‘ এই উদ্দীপিত ঘোষণান্তে মতিদা, গাড়ি খুলে নামিয়ে বলদগুলির সামনে খড়ের আঁটি খুলে দিয়ে আমাদের নামবার জায়গা করে দিল। সবাই গাড়ি থেকে নামার পর মতিদা বনানীর আড়ালে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। আমাদের তখন এসব দেখার সময় নেই। শালনদীর তকতকে জল আমাদের বিপুল ভাবে টানছে। আমরা সবাই নদীর দিকে এগিয়ে গেলাম। নববধূ এই খোলামেলা নদীর প্রকাশ্যে স্নান করবে ভাবতেই পারছে না-‘ না না, আমি ঠিক আছি, তোমরা সবাই স্নান সেরে নাও, আমার খুব একটা অভ্যেস নেই তো’- বলার সাথে সাথে হর্ষ ও স্তুতি চেপে ধরল বৌদিকে। ‘আরে এখানে খোলামেলা ঠিকই, কিন্তু আশেপাশে একটা লোক দেখাও তো। এ জায়গাতে কেউ আসবে না। গ্রামগুলো এখান থেকে দূরে। তারা এখানে কেউ স্নান করতে আসবে না।‘ আর কোনো কথা নেই এখন। দুজনে মিলে টেনে নামাল নতুন বৌ-কে শীতল জলের কবলে। সঙ্কোচজনিত অস্বস্তি দূর হয়ে গেল এক নিমেষে। ভেসে গেল নববধূর লাজ।
ক্রমশ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন