জীবনানন্দকে
ছেলেটি উন্মাদপ্রায়, মেয়েটিও তথৈবচ;
রূপসী স্ত্রীর কাছেও নেই তেমন প্রশ্রয়।
সংসারে দায়দায়িত্ব অবশ্যই নিতে হয়,
কবি বলে একচুল ক্ষমা? নৈব নৈব চ!
তবুও গভীর রাতে একা ছাদে, ঘরে পায়চারি;
হৃদয়ের অনুভবে ডুব দিয়ে খুঁজে দেখা প্রিয়মুখ,
অথবা বোধের কাছে জেনে নেওয়া কতটা অসুখ
কুরে কুরে খেলো মেধা, প্রেম, শব্দের ঘরবাড়ি।
কবিতায় ভালোবাসা নিয়ে কত না উচ্ছ্বাস,
অথচ জীবনে দ্যাখো লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান –
অপ্রেমে প্রেমিক কবি ক্ষোভে তাই চলে যান
নির্বোধ ট্রামের কাছে; তারপর অন্ধকার আর ঘাস
ঘিরে ধরে মৃতদেহ – ঘুচে যায় সব লেনদেন!
জীবনে আনন্দ নেই, হেসে বলে বনলতা সেন!
[প্রাসঙ্গিক তথ্য : আজ থেকে তিরিশ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি : জীবনানন্দের জন্মদিনকে মনে রেখে জন্ম নিয়েছিল ‘জীবনানন্দ-চর্চা কেন্দ্র’। অধ্যাপক তরুণ মুখোপাধ্যায় ততদিনে ‘জীবনানন্দ জিজ্ঞাসা’ (সম্পাদিত সংকলন) ও ‘কবি জীবনানন্দ’ (নাটক) প্রকাশ করে ফেলেছেন। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মডেলে সেই চর্চা কেন্দ্র তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করলেন। স্ত্রী, পুত্র, কবি শীতল চৌধুরী এবং সেই সময়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রীরা ছিলেন সঙ্গে। বিভিন্ন সময়ে এসেছেন বিশিষ্টজনেরা : অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক প্রদ্যুম্ন মিত্র, সন্দীপ দত্ত প্রমুখ। চিঠি দিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন, উপদেষ্টা হতে সম্মত হয়েছিলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও কবি তরুণ
সান্যাল। ‘জীবনানন্দ-চর্চা’ ফোল্ডারে নানারকম দাবি ও জীবনানন্দ-চর্চার নানা নিদর্শন রাখা হয়েছিল তখন। বিশেষত দ্বিতীয় সংখ্যায় একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা সংকলিত হয়, কবি মঞ্জুভাষ মিত্র, কুন্তল চট্টোপাধ্যায়, প্রদ্যুম্ন মিত্র প্রমুখ ছিলেন অনুবাদক। ১৯৯৪-২০০৬ : ছটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ-চর্চা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি আর। তাঁর পুত্র ঋতম্ প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপক হয়ে আসার পর তিনটি ভার্চুয়াল সভা করেন ২০২১ সালে, যেখানে
ইয়েটস্ ও জীবনানন্দ, অলোকরঞ্জনের জীবনানন্দ, জীবনানন্দের কবিতায় রূপকথার পুনর্নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে এই কেন্দ্রের। তবে সবটাই অনিয়মিত। তবু আজ দেখা যায়, সেই ১৯৯৪ সালে তোলা চর্চা কেন্দ্রের দাবি বাস্তবায়িত হয়েছে : কবিতা আকাদেমি ‘জীবনানন্দ পুরস্কার’ দেয় এখন, বাংলা আকাদেমি নিয়মিত আয়োজন করে জীবনানন্দ স্মারক বক্তৃতার। তাছাড়া জীবনানন্দ সভাগৃহ, তাঁর পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ইত্যাদির কাজও হয়েছে এখন। ‘জীবনানন্দ’ নাম দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পত্রিকা প্রকাশ পায়। তাঁর পাণ্ডুলিপি ও ডায়েরি নিয়ে ভূমেন্দ্র গুহের পথেই অসামান্য কাজ করছেন গবেষক গৌতম মিত্র। সিলেবাসে এসেছে তাঁর প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্য, চলছে তাঁর অনুবাদ নিয়ে চর্চাও। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগীয় আলোচনাকক্ষের নামও এখন ‘জীবনানন্দ সভাকক্ষ’। যদিও তাঁর বাসগৃহ ও ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে সংগ্রহশালা, বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনানন্দ অধ্যাপক পদ সৃষ্টি ইত্যাদি আজও অধরা। জীবনানন্দ-চর্চা কেন্দ্রকে যদিও কেউই সেভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, তাঁর সম্পাদকও নিজের মতো করে জীবনানন্দ নিয়ে একাধিক কাজ করেছেন, খান দশকে বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন। নিরন্তর উৎসাহ দিয়েছেন জীবনানন্দ-চর্চায়। তাঁর পুত্র হিসেবে ঋতম্ যেমন এই উত্তর-রৈবিক কবিকে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করেছেন কাজ করিয়েছনে; তেমনই তাঁর পুত্রবধূ ঐন্দ্রিলাও এখন তাঁর
পিএইচ-ডি-র কাজ করে চলেছেন কবির ডায়েরি ও সৃষ্টির তুলনামূলক বিচার নিয়েই। জীবনানন্দ-চর্চা কেন্দ্রের স্লোগান ছিল মূলত তিনটি : জীবনানন্দ পড়ুন জীবনানন্দ পড়ান, জীবনানন্দ চর্চার অন্য নাম
আধুনিকতা, জীবনানন্দ চর্চাই হোক আমাদের জীবনচর্যা। তরুণ মুখোপাধ্যায়ের যে-কাব্যটি ২০০০ সালের শেষ অফলাইন সভায় উদ্বোধন করা হয়েছিল, সেই কাব্যের নাম ‘বালিশে স্বপ্নের দাগ’, সেখানেই পড়া হয় এই কবিতা ‘জীবনানন্দকে’ – যা কবির জীবনের ভাষ্য বলা যায়।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন