সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

স্মরণঃ কবি-দার্শনিক-যোগী শ্রীঅরবিন্দ (১৮৭২-১৯৫০)-এর জন্মসার্ধশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি


কবি-দার্শনিক-যোগী শ্রীঅরবিন্দ (১৮৭২-১৯৫০)-এর জন্মসার্ধশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি
পরাধীন ভারতে বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াকারাবাস এবং ক্রমশ বিপ্লবী থেকে যোগী হয়ে ওঠা – এই যাত্রাপথে কবিতা কখনওই অরবিন্দ ঘোষ তথা শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গ ছাড়েনি। মাত্র সাতবছর বয়সে দার্জিলিং কনভেন্টে পড়ার সময় তাঁর মধ্যে যে কবিপ্রতিভার স্ফুরণ ঘটেতাকেই লালন করেছেন তিনি। ছোট  দীর্ঘ কবিতাঅসংখ্য দেশীয় সাহিত্যকর্মের ইংরেজি অনুবাদ এবং মননশীল প্রবন্ধপত্রাবলীধর্মদর্শন তাঁর বিস্তীর্ণ রচনাবলীতে ছড়িয়ে রয়েছে। মূলত ইংরেজিতে লেখালেখি করলেও মাতৃভাষা বাংলাতেও তাঁর একগুচ্ছ রচনার সংকলন ইদানীং দুই মলাটে সহজলভ্য। অরবিন্দের কবিতায় যেমন পুরাণের নবনির্মাণ ঘটেছেতেমনই ছোট কবিতার গীতলতা আমাদের মনোহরণ 
করে। যাঁরা তাঁর দীর্ঘ কবিতা এবং আখ্যান কবিতাগুলির দার্শনিক তত্ত্বকে দুরূহ ভাবেনতাঁরা এই ছোট লিরিকগুলি পাঠে অরবিন্দের কাব্যদর্শনের মর্মবাণীটুকু সহজেই অনুভব করতে পারেন। কারণ কবি নিজেও বিশ্বাস করতেন : Only brief work intense, lyrical in spirit’ তদুপরি বিশ্বকবিতা পাঠের অভিঘাতে তাঁর কবিতায় স্বদেশ  বিদেশের কাব্যদর্শনের যে সমীকরণ তৈরি হয়েছিলতাতে ভারতীয় ইংরেজি কবিতালোক সমৃদ্ধ হয়েছে। যদিও তাঁর অধিকাংশ কবিতা পরিণামে এক দিব্যানুভবে পৌঁছতে চেয়েছেতবু প্রেম বা কামকে কোথাও অবজ্ঞা করেননি তিনি। তাই তাঁর চিত্রাঙ্গদাপুররবাউলূপী কিংবা রুরু প্রেমাস্পদকে নিবিড়ভাবে পেতে চায় আত্মত্যাগের মূল্যে। আর কবির বিজয়-বৈজয়ন্তী ‘সাবিত্রী’ হয়ে ওঠে কালো পেরিয়ে আলোর সাধনাযা আসলে অমৃতের আস্বাদ দেয়। এখানে ‘কালেক্টেড পোয়েমস্‌’ থেকে তাঁর চারটি ছোট কবিতার অনুবাদ সংকলিত হলো। অনুবাদক অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত  তরুণ মুখোপাধ্যায়।   

একটি গাছ

 

নদীর বালুতটের কাছে বৃক্ষটি তো

তুলে ধরেছে উপর ডালপালাকে

আকাশমুখী আঙুলগুলি অনুপনীত,

মর্ত্যে বাঁধা, স্বর্গসংরাগে।

এই তাহলে মানবাত্মা : মাটির খিদেয়

শরীর, মগজ স্বর্গ-উড়াল ঠেকিয়ে দেয়। 

 

(মূল কবিতা : ট্রি, অনুবাদ : অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত)


সন্ধ্যা

 

একটি স্বর্ণিল সন্ধ্যা, যখন ভাবুক সূর্য তার

চলনে প্রথানুগত জৌলুস খারিজ করে, যত

গাছগুলি নুয়ে পড়ে তাদের হরিৎ সঙ্গিনী

সফল মাতার  দিকে, ওরা অর্ধোচ্চারআর এই

বিশাল স্থির সমুদ্র। প্রহর ঈশ্বরের সবচেয়ে সমীপে।

দীর্ঘ পথগুলি যবে অতিক্রান্ত ছিল সেই প্রত্ন, ঋদ্ধ সময়ের মতো।

 

(মূল কবিতা : ইভনিং, অনুবাদ : অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত)



জীবন মৃত্যু

 

জীবন মৃত্যুমৃত্যু জীবন; শব্দদুটি বহমান যুগে যুগে

আমাদের চিন্তাস্রোতে, চেতনায় সুদৃঢ় প্রোথিত;

দুই বিপরীত, কিন্তু এখন দীর্ঘ পাতায় লুকায়িত;

এবার মুক্ত, স্বাধীন, সত্য যে স্বপ্নেও অকল্পিত

কেবল জীবন কিংবা মৃত্যু, যেন ছদ্মবেশী প্রাণ,

জীবন সে ক্ষণিক মরণ, যদি না বিস্ময়ে হই চমকিত।

 

(মূল কবিতা : লাইফ অ্যাণ্ড ডেথ, অনুবাদ : তরুণ মুখোপাধ্যায়)


পদ্মাসীনা সরস্বতী

 

মাগো, তোমার অশ্রু নামে দ্রুত পদ্মদলে,

ওগো মাতা শ্বেতভুজা, মধু যেন ঝরে অশ্রুজলে;

যদিও তাদের মধুরতা আর হয় না উজ্জ্বল,

সে সোনালি আলো, সে সুবাস স্বর্গের সম্বল;

সেই আলো, সে সুরভি মুছে গেছে চিরতরে

তার দুটি ঠোঁট থেকে; সে মৃত তবুও অমর তব বরে।

 

(মূল কবিতা : সরস্বতী উইথ দ্য লোটাসঅনুবাদ : তরুণ মুখোপাধ্যায়)



কবি পরিচিতি  তথ্যসংকলন : ঋতম্‌ মুখোপাধ্যায়




 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন