গল্পকার বারান্দায় রাখা চেয়ারে এসে বসলেন। ঘরের বাতি নিভিয়েছেন অনেকক্ষণ আগেই। বাইরে গাঢ় অন্ধকার। বাড়ির সামনেই ল্যাম্পপোষ্টের আলো বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বলছে না।
মধ্যবয়সী গল্পকার তাঁর নতুন গল্পের প্লটটি সংহত করতে চেষ্টা করছেন। এখন তিনি বাড়িতে সম্পূর্ণ একা। তাঁর স্ত্রী একমাত্র শিশুপুত্রকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে। ঠিক এরকমই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন গল্পকার। সংসারের নানাবিধ চাপে লেখায় কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। খুঁজছিলেন নির্জনতা। মনের মধ্যে অনবরত ছুটতে থাকা বাক্যসমূহ কেন্দ্রীভূত করে তিনি নিয়ে আসতে চান কলমের ডগায়।
অনেক লেখা বাকি রয়ে গেছে গল্পকারের। কয়েকজন সম্পাদককে কথা দিয়ে রেখেছেন তিনি অমুক সময়ের মধ্যে লেখা অবশ্যই পৌঁছে যাবে পত্রিকার দপ্তরে। কিন্তু উদ্দিষ্ট গল্পগুলি কিছুতেই লিখে উঠতে পারছেন না গল্পকার। আসছে না সেই কাঙ্ক্ষিত একাগ্রতা।
সেদিন স্ত্রীর সঙ্গে একচোট কথা কাটাকাটি হতেই গল্পকার আরও যেন হারিয়ে ফেললেন নিজের লেখকসত্ত্বা। বাধ্য হয়েই বলে ফেলেছিলেন, আঃ, আমায় একটু একা থাকতে দেবে? সংসারের যাতাকলে পিষতে পিষতে হারিয়ে ফেলছি আমাকে। যাও না, ছেলেকে নিয়ে নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে এলেই তো পার কটাদিন। আমি একটু শান্তিতে লিখি।
স্ত্রী বলেছিলেন, পারবে তো? সবদিক সামলে?
- পারব, পারব।
ঠিক এইসময়টা রোজই বারান্দায় চেয়ারে এসে বসেন গল্পকার। যে নির্জনতা তাঁর কলমকে আবার গতিময় করে তুলবে বলে ভেবেছিলেন তিনি, তা পেয়ে গেছেন দিন দুয়েক আগেই। শহরের দ্বিতল বাড়িতে তিনি এখন সম্পুর্ন একা।
কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও লেখার সেই স্বাচ্ছন্দ্য আসছে না তাঁর। ভরিয়ে তুলতে পারছেন না পাতার পর পাতা। যে প্রার্থিত একাকীত্বে নিশ্চিত সাফল্য আসবে বলে ভেবেছিলেন তিনি, তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে। শুধু ঘুরেফিরে মনে আসছে শিশুপুত্রের মুখখানি এবং তার এলোমেলো আধো আধো অর্থহীন কথার অনুরণন। প্রতিদিনের সাংসারিক ব্যস্ততার দিনলিপির চিত্র কিছুতেই মন থেকে সরিয়ে দিতে পারছেন না তিনি। প্রত্যাশিত নির্জনতায় গল্পকার যেন আরও একাকী আরও অসহায় বোধ করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন