ভবতারণের জোত
১৭।
‘গদাধরের পারে পারে রে
ও তোর মাহুতে চড়ায় হাতি’
হাটের মায়ায় জড়ানো জীবনের ফাঁকে ফোঁকোরে রাধাকান্ত আর কইকান্ত নিজেদের সীমাপরিসীমার
কোন তলই হয়তো পায় না।তাই তারা হাটের গমগম বিস্তারে নিজেদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয়।আর
চারপাশের চেনা অচেনার নিগরে বৃত্ত ভাঙ্গার গানের সাজানো সিজিলমিছিল যেন চক্রাকারে পাক
খেতে খেতে নদীর চরের দিকে ছুটে চলা বাতাসের প্রবাহে জায়মানতার এক আবহ রচনা করে
ফেলে,আর এর পরে তো কিছু বলার থগাকে না কিছু!কেবল শামুকতলার হাট থাকে।কুপির
আলোর রহস্যের কিনারে কিনারে ভাসতে থাকে পাইকার আর দালালদের উচ্চকিত গান-
‘হাটের মধ্যে শামুকতলা
হালুয়া গরুর নাগছে মেলা’
জীবন জমে ওঠে এভাবেই।উত্তরের মাঠে মাঠে ধানের গন্ধের মতন আন্ধারাতিতে জোনাই জ্বলে।
আবহমানের সব মানুষজনের জীবন ও শূণ্যতা আশ্চর্য এক দর্শন ছড়িয়ে দিতে থাকলে আর ইছুই
করার থাকে না।প্রবাহিত নদীর জলে তখন ব্রতকথা ও শোলার মুটুক ভাসে,ভেসেই যায় তারা
নিয়তিতাড়িত,বুঝি বা হালাউ হালাউ দুধের ঘটির মতন।আর জঙ্গলবাড়ির বাঘ ডেকে ওঠে,গানের
পিঠে গানের মতন;কথার পরে কথার মতন।
১৮।
অনিমেষ কালজানি নদীর দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুন্সীলাইনের কবরখানায় একটু থামে।তাকে থামতেই
হয়।কেবল থামে না,সে সটান ঢুকে পড়ে কবরখানার ভেতরে।দিন কুড়ি আগের শনিচরী এক্কার
কবরের পাশে বসে পড়তে গিয়ে তার দু’চোখ জলে ভরে ওঠে।
শনিচরী ছিল তার বন্ধু।করম পূজোর মেলায় কিংবা পলাশবাড়ীর লোকমেলায় শনিচরীর সাথে কত
নাচ নেচেছে অনিমেষ।আর কখনো শনিচরী তাকে বলবে না_’কায়সন আহিস’।
হায়রে জীবন!
অনিমেষের মনে পড়ে গেল হাতিদের যাতায়াতের রাস্তায় কতবার সে পথ হারিয়ে ফেলেছিল।
কিংবা ধাইধাই বিটের অরণ্য থেকে নদী শীলতোর্সা পেরিয়ে গন্ডার ঢুকে পড়তো জঙ্গল চিলাপাতায়।
কত কত দৃশ্য জুড়ে জুড়ে থাকে জীবনে!
আর মোরগ লড়াইয়ের মাঠে বারবার রুমাল হারিয়ে ফেলতো শনিচরী।
ক্রমশ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন