বুধবার, ১ জুন, ২০২২

অমলেন্দু চক্রবর্তী-র ঝুরোগল্প

এবার ১৯শের মন্বন্তর

কেমন যেন একটা অস্থির সময়।

যতদিন যাচ্ছে। অস্থিরতা বেড়েই চলেছে, প্রথমে সংক্রমণ আক্রান্ত সংক্রান্ত। কোভিট১৯ , পঙ্গপালের ফসলে আক্রমণ।তারপর সিয়াচেন লাদাখে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের এল‌ওসি,গন্ধ গন্ধ যুদ্ধ মতো। ব্রীজ পথ পরিবহন বাঙ্কার সাঁজোয়া গাড়ি গ্রেনেড লঞ্চার কামান রকেট। সর্বদলীয় বৈঠক। এদিকে লকডাউন সব মিলেজুলে একটা বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার। রোজগার "ঠপ"সরকারি সহায়তা ব্যাঙ্কএ্যাকাউন্টে- - - - এইসব কতদিন।সময় যেন এক্কেবারে থেমে গেছে। মিলি আর পলাশের বিয়ের ফাইনাল দিন ধরা হয়েগেছিল।জনতাকার্ফুর পরের দিনই লকডাউন। সেই যে শুরু হল বছরের মাস অতিক্রান্ত প্রায়।এক বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগের আপ্রাণ চেষ্টা,এই অঞ্চলের‌ই। সব সময় যেমন সবার জন্য নয়। আবার কোন সময়‌ই কারো জন্য কখনও নয়। বন্ধুর যুক্তিকে পাথেয়ো করে কাজে নেমেতো পড়লাম কিন্তুক সময়ের ফোঁকর গোলে বেরোনো যাওয়া হচ্ছে না। মুখোশ নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম  হাজিরা দিতে।

               --কি ব্যাপার যোগাযোগ করে একেবারে সাইলেন্ট মেরে দিলি যে,বড়।" প্রজ্ঞা হাসি হাসি মুখে আমার থুতনি ছুঁয়ে দিল।

                --এইটিই চাইছিলুম বলে।

                --তার মানে ?

                --সরাসরি কতদিন তোকে দেখিনি বল, খুব কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছিল তোকে। আমরা একক্লাসে পড়লে কিহয় ? তুই আমার চেয়ে বছর ছয়মাস ছোটোই হবি।" এইবার ওরদিকে সরাসরি তাকাই প্রজ্ঞা একটু বেশিই রোগা হয়েগেছে।ওর বর রঞ্জন বছর দশেক হল মারা গেছে। উশৃঙ্খল টাইপ ছিল, প্রজ্ঞাকে খুব টর্চার করতো। অথচ প্রজ্ঞা ধনি পরিবারের একমাত্র সন্তান প্রচুর সম্পত্তি। কেন যে এমন হয় ছেলে বৌ মেয়ে জামাই নাতি নাতনি। তবুও সেই প্রজ্ঞা  প্রজ্ঞাতেই আছে।একটা অজানা ভয় সর্বক্ষণ। ভান করতে জানালো না কোনোদিন। তবুও বললাম

                --ইসস এইজন্য তুই !!

                --আরে এই তো এলি, কতকথা জমা আছে সব একটা একটা করে। 

                --সে আরেকদিন হবে, যোগাযোগ করলিনা কেন ?

                 --আমি ওসব পারিনা রে !!

                --চেষ্টা কর এতদুর পড়াশোনা করে যদি বলিস পারিনা। লোকে হাসবে।আর যে কাজে এসেছি.... আগে আমার জন্য এক কাপ কড়ক্ চা করে আনতো।

                  --খুব চলবে।

                  

                               ক্রমশ কোরোনাকাল। ভাইরাস মহামারী, প্রথমেই মানুষ কে গ্রাস করতে শুরু করল।

করেন্টা‌ইন ফেরোত মানুষ গুলি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আইসোলেশনের ব্যবস্থা কমে আসছে। মৃত্যুসংখ্যা বাড়ছে।মাস্কে মুখ ঢেকে দুরত্ব বজায় রেখে। মুখপোড়া হনুর মতো মানুষে মানুষে অপরাধ বোধ। তবুও আমরা জোট বাঁধতে। চাই জোটবদ্ধ লড়াই করতে চায় অথচ দুরত্ব রেখে মৃত্যুমিছিল তাকিয়ে  দেখতে হচ্ছে এরই নাম পাপ। স্তব্ধ হয়ে গেল রেল রোড স্থল আকাশ যান বাহন  স্পর্শ করে দেখার অধিকার কারোও নেই। পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানিরা ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যস্ত। সতেজ কেবল পশুপাখি বৃক্ষ আকাশ বাতাস। যারা নিজেদের মহাশক্তিধর ভাবতো তারা গৃহবন্দি অসহায়। পর্যাবরণ স্বচ্ছ হচ্ছে প্রকৃতি আবার সেজে উঠেছে, ব্যতিরেক মানুষ। অকাল সকাল বিকাল প্রয়াণপর্ব জারি আমার নিকটআত্মীয় স্বজনবর্গ একএক করে বেশ কয়েকজন মৃত্যু মিছিলে সামিল হল। অচ্ছুৎএর মত শবদেহ প্লাস্টিকের মোড়কে নির্জনস্থানে সবার অলক্ষে দাহ অথবা কবর। অন্তর নিহিত আর্তনাদ চিৎকার অন্তস্থলেই সমাহিত হয়ে যাচ্ছে। আর কতদিন আর কতদিন...... 


 

২টি মন্তব্য: