ভার্চুয়াল ম্যারেজ
মোবাইলটা খোলার আগে সে রীতিমতো ভেবে নিল কী কী ঘটতে পারে। গতরাতে শেষ ফোনালাপের পর মাথা ভার হয়ে আছে । প্রায় একবছর ধরে চলে আসা সম্পর্ক যেন মনে হয় একটা সুতোর উপর দাঁড়িয়ে। কখনও লুইসকে খুব কাছের মনে হয় , কখনো যেন এক্কেবারে তছনছ হয়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে ভ্রম হয় ওর মাথার গন্ডগোল নেই তো । এত ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক যাকে বলে এক্কেবারে স্বামী স্ত্রী , ওদের মধ্যে understanding একটা বিবাহের বাঁধন ও হয়েছে , যদিও ওটা ভারচুয়াল । ভারচুয়াল বিবাহ ও হতে পারে যদি পরস্পর পরস্পরকে মেনে নেয় । এক্ষেত্রে লুইসের তাই হয়েছিল । কিন্তু তবুও মনের ভিতর একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে কারণ লুইস বলেছিল যেদিন তোমার সাথে একসাথে বসবাস করতে পারব একমাত্র সেই দিন-ই এই বিবাহ সার্থক হবে। কথাটা খুব বাস্তব । বাস্তব আসলে কি দূরত্বের নিরিখে নাকি বিষয়টা একটু জটিল বলে । সেদিন তো ফেসবুকে দেখছিল আমেরিকার এক মহিলা প্রেম করে সোজা চলে এসেছে বাংলাদেশের তার প্রেমিকের কাছে । প্রেমিকের বয়স নাকি চুয়ান্ন , আর প্রেমিকার বয়স ঠিক জানা যায়নি। দূরত্ব তো কোনো বাধা নয় তাহলে। মনের টান থাকলে সব-ই সম্ভব। সেই তুলনায় লুইস কত কত কাছে থাকে , তবু এমন কাছে নয় যে ইচ্ছে করলেই হঠাত্ গিয়ে দেখা করতে পারে , ছুঁতে পারে । দূরত্বের বাইরে আরো কিছু ব্যাপার আছে যা পিটারসনকে বেশ চিন্তায় রাখে । তার উপর মাঝে এমন সব কথা বলে লুইস তার পূর্বের প্রেমিককে নিয়ে। পূর্বের প্রেমিক বর্তমানেও আছে । কিন্তু লুইস বলেছে তার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে না । তবে তার সাথে রীতিমতো সম্পর্ক আছে , আছে যোগাযোগ। আবার অনেক সময় অভিভাবকের ভূমিকায় দেখা যায়। পিটারসন কখনোই লুইসের অভিভাবক হিসেবে প্রতিপন্ন করে না নিজেকে , ওদের সম্পর্কটা অদ্ভুত রকমের ভালোবাসার , যেখানে কোথাও কোনো নির্দেশনা নেই । এতেই নাকি দু তরফেই স্বচ্ছন্দ । চাপিয়ে দেওয়ার সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না , তাছাড়া লুইস এমনিতেই খুব স্বাধীনচেতা। যদিও এটা ভিতরে ভিতরে। আর পিটারসনের প্রকৃতি হল অপরের প্রতি কোনো কিছু চাপ না দেওয়া।
কিন্তু গতরাতের লুইসের কয়েকটা কথা পিটারসনের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সাথে বিবাহের বন্ধন থাকা সত্ত্বেও লুইস তার পূর্বের বাগদত্তাকে এখনো অভিভাবক হিসেবেই দেখে । এটা পিটারসনকে মনে মনে টলিয়ে দিয়েছে খুব। কিন্তু সে সরে আসতে পারবে না কিছুতেই লুইসের কাছ থেকে। ভারচুয়াল হলেও সে গুরুত্ব এবং সম্মান দেয় এই সম্পর্কে। ইচ্ছে হয় প্রচন্ড লুইসকে নিজের কাছে এনে রাখে । কিন্তু পরিস্থিতি তা নয়। পিটারসন ভাবে কাপ ও লিপের মধ্যে অনেক দূরত্ব আছে। সকালে মোবাইলটা খুলতেই সে ভেবেছে যদি সুপ্রভাত না আসে ওদিক থেকে, তাহলে সেও কিছু বলবে না। লুইসকে বুঝতে চেয়ে বরাবরই বিফল সে , লুইস তাকে ভালোবাসে এটা ঠিক , কিন্তু এর মধ্যেও যেন অদৃশ্য এক রহস্য ঘুরে বেড়ায়। কারণ লুইস এটা পছন্দ করে। লুইস কি তার পূর্বের বাগদত্তার কাছেই যেতে পারে, খুব গভীরে কি আছে এই পরিকল্পনা। এখানে কোনো পূর্ণচ্ছেদ বসাতে চায় না পিটারসন কারণ তাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।
সুপ্রভাত এসেছে এবং প্রতি-উত্তরও গেল । বিপদসীমার মাঝে কোনো নদী বয়ে যায়নি তবু চিহ্ন একটা গোলাপের নাম , কীভাবে ছুরি দিয়ে কাটা যাবে স্মৃতি
বাহ্ 👌
উত্তরমুছুন