সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১

দেবদুলাল পাঁজা-র অণুগল্প

 

পুলিশ

বৃন্দাবন মানে বৃন্দাবন জানার বয়স এখন বাষট্টি পেরিয়ে গেছে। এই বঙ্গোপসাগরের কূল -ঘেঁষা ঘোড়ামারা দ্বীপে সে বহুদিন পুলিশের দায়িত্ব পালন করে আসছে। মেলা হোক, খেলা হোক কিংবা পূজোপার্বণ লাঠি হাতে সে হাজির ঠিক সময়ে।  কেউ তাকে কোনোদিন চাকরিটা যেহেতু দেয় নি, তাই তার রিটায়ারমেন্টও হয় নি আজো নিয়ম মেনে। নিন্দুকেরা বলে... মরলে নাকি তবে ওর চাকরি যাবে। বিশেষ করে প্রতি হাটবারের দিনমানে শনিবার দিন... বৃন্দাবন স্বেচ্ছায় নিজের এই মহান দায়িত্ব পালন করে। গত তিরিশ বছর ধরে।
ঘোড়ামারা দ্বীপের দুটো দিক অবিরাম ভেঙে চলেছে সমুদ্রের ভয়াল টানে। আর বৃন্দাবনের সংসারও ভেঙে ভেঙে সে এখন একান্তই একা একটা নিঃস্ব মানুষ। কমবেশি কুড়ি বছর।
দুপুরের পর সে পুলিশ। কিন্তু, সকালবেলায় বৃন্দাবন একদম অন্য মানুষ। দ্বীপের নদীর বাউন্ডারিতে ঘুরে ঘুরে মদের বোতল আর ককশীটের  ছোটবড় টুকরো সংগ্রহ করা বৃন্দাবনের বহুদিনের অভ্যাস। পরে সেগুলো আড়তে নামমাত্র দামে বিক্রি করে সে। দু-পয়সা এভাবে  আয় না করলে এই বেতনবিহীন চাকরি বজায় রাখা এতোদিন তার পক্ষে কীভাবেইবা সম্ভব হতো!
গ্রামের লোক অবশ্য অন্য কথা বলে। বাপ-মা বৃন্দাবনকে বিয়ে দিয়েছিলো ঠিক সময়েই। কিন্তু সেই যৌবনকাল থেকেই ঈষৎ আড়পাগলা হওয়ার কারণে ওর বউ সুন্দরী ওকে কাছে ঘেঁষতে দিতো না একেবারেই। যত দিন গেছে বৃন্দাবন আড়পাগলা থেকে ফুলপাগলা হয়েছে। সুন্দরী আর বৃন্দাবনের  মধ্যেকার ফাঁকও বাড়তে বাড়তে সমুদ্রের মতো হয়েছে। দশ বিঘা চাষের জমি ছিলো বৃন্দাবনের বাপ নিবারণের। নিবারণ গত হওয়ার পর সে সব এখন সুন্দরীর জিম্মায়। সুন্দরী বিয়ে করে নি নতুন করে। তবে তার একজন ধরা বাবু আছে। তার নাম হরিপদ। সে পঞ্চায়েতের মেম্বার। সুন্দরীর থেকে কম করে পাঁচ-সাত বছরের ছোট। প্রতিদিন পঞ্চায়েতের কাজ সেরে সন্ধেবেলা হরিপদ আর সুন্দরীর যে লীলাখেলা চলে তা গ্রামের কারোরই অজানা নেই। গ্রামের সবাই সব জানে আর ব্যাপারটা যেনো বেশ উপভোগও করে।
বৃন্দাবন রাত নটায় বাজার থেকে ফিরে বাইরের বারান্দার খাটে শুয়ে পড়ে ক্লান্তিতে। আড়ালে সবাই বৃন্দাবনকে নিয়ে হাসাহাসি করে আর বলে... শালা নাম্বার ওয়ান... ঘরের  ডবকা বউকে দিনের পর দিন লোকের সংগে শুতে দেখে দেখে ওর মাথাটাই  গেছে... 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন