বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৩
সম্পাদকের নিবেদন
৬ আগস্ট, ১৯৪৫। জাপানের হিরোসিমা শহর। জনবসতি প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। বি-২৯ বিমানে করে পরমাণু বোমা ‘লিটল বয়’ নিয়ে যাওয়া হল। একটা ভয়ংকর বিস্ফোরণ হল। কালো ধোঁয়া আর লাল আগুনে ছেয়ে গেল চারদিক। বোমার নাম ‘লিটল বয়’ অর্থাৎ ছোট্ট শিশু। বিকৃত রুচির চরম নিদর্শন। শিশুদের নামে পৃথিবীর প্রথম পারমানবিক মারণাস্ত্র তৈরি করেছিল আমেরিকা। বোমার ভেতর জ্বালানি হিসেবে ছিল ইউরেনিয়াম-২৩৫। দু লক্ষ মানুষ চিরকালের মতো পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তৎক্ষণাৎ। যারা বেঁচেছিলেন, তারা তেজস্ক্রিয়তার শিকারে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অসহ্য দিনযাপন করেছেন।
পৃথিবী জুড়ে উত্তাল প্রতিবাদ শুরু হল। এরই মাঝে দুদিন পর, ৯ আগস্ট পরমাণু বোমা পড়ল নাগাসাকি শহরে। পৌনে তিন লক্ষ মানুষের বাস। প্রায় সত্তর হাজার মানুষের সাথে সাথে জীবন গিয়েছে। বোমার নাম ‘ফ্যাট ম্যান’ অর্থাৎ মোটা মানুষ। ‘ছোট্ট শিশু’ এবং ‘মোটা মানুষ’দের নিয়ে আমেরিকার বিকৃত রসিকতা। এই বোমার ভেতর জ্বালানি হিসেবে ছিল প্লুটোনিয়াম-২৩৯। ঝড় আগুন আর তেজস্ক্রিয় ভস্মের কালো মেঘ হিরোসিমা ও নাগাসাকির আকাশ ছেয়েছিল সে সময়। এই দানবীয় কান্ডের ফলস্বরূপ এখনও হিরোসিমা আর নাগাসাকিতে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মাচ্ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই তেজস্ক্রিয়তার বীভৎসতা চলতে থাকবে।
পরমাণু বোমার বিরুদ্ধে পৃথিবীতে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের অন্যতম অগ্রণী ব্যক্তিত্ব বিজ্ঞানী লাইনাস পাউলিং। আমেরিকায় থেকেছেন। প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁর খ্যাতনামা বই ‘নো মোর ওয়ার’। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রসায়নে নোবেল পেয়েছেন। বিশ শতকের বিস্ময় ছিলেন পাউলিং।
নীল আকাশে এক ঝাঁক পায়রা গন্তব্য খুঁজতে থাকে। শিশিরসিক্ত ধান-শিষ ছোঁয় আল্পনার মায়াবী রং। সকলকে ইংরেজি শুভ নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই। ভালো থাকুন সকলে।
রোশনি ইসলাম
সোনালি বেগম
ঋতম্ মুখোপাধ্যায়-এর ধারাবাহিক গদ্য : "কবিতার বাতায়ন"
জেগে ওঠে রূপের ঈশ্বর
মৃত্যু শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে কতবার, তাকে বলেছি – যাও
প্রেম কতোবার এসে দাঁড়িয়েছে হৃদয়ের দ্বারে, তাকেও বলেছি –
যাও।
কেবল বন্ধুতা নিয়ে বেঁচে আছি – তাদেরকেও এবার বলবো – যাও।
ঈশ্বর এসেছে কাছে, তাকে তো বলতে পারি না – যাও।
সে আমার সর্বাঙ্গে আছে, যেমন সর্বত্র থাকে, তাকে তাড়াবো
কী করে?
আমার সর্বাঙ্গে কবিতার কথামালা, সেখানে ঈশ্বর –--- (নিরুপায়, গ্রহণের অন্তরীণ আলো, ২০১২)
৬৯ বছর বয়সে হঠাৎই প্রয়াত হলেন সত্তরের কবি সোমক দাস। উনিশে ডিসেম্বর ২০২২ ফেসবুকের পাতায় ওঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে খারাপ লাগছিলো খুব। মনে পড়ছিল, ওঁর কাব্যসংগ্রহের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে আমার গ্রন্থ সমালোচনার কপি হাতে পেয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন আমাকে এ জি বেঙ্গল অফিসের সামনে। ওঁর তিনটি অধুনা দুষ্প্রাপ্য বই ও পত্রিকা ‘পোয়েট্রি রিভিউ’ উপহার দিয়েছিলেন। সালটা সম্ভবত ২০১২। তারপর আর যোগাযোগ হয়নি কবির সঙ্গে। তাঁর প্রথম কাব্যের নাম ‘নিরাপদ দূরত্বে থাকুন’ (১৯৭৮), লিখেছেন একাধিক গল্প-উপন্যাস। প্রকাশ পেয়েছে চল্লিশের অধিক কাব্য এবং দুটি কবিতাসংগ্রহ। নির্বাচিত সংকলনের নাম ‘সোমক দাসের কবিতা’। তাঁর কবিতা বুদ্ধিদীপ্ত এবং আত্মজৈবনিক। ফ্রান্সেও কবিতা পড়তে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন কবি। এই লেখা পুনঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রয়াত কবিকে আমার শ্রদ্ধা জানাই।
কথাসাহিত্যিক সোমক দাসের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল, কিন্তু কবির সঙ্গে এই প্রথম। লিট্ল ম্যাগাজ়িনে ছড়ানো তাঁর দু’একটা কবিতা যে পড়িনি এমন নয়, কিন্তু মনে দাগ কাটেনি। তবে রবীন্দ্রোত্তর বাঙালি কবিদের ঈশ্বর ভাবনার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার সময় তাঁর কাব্যসংগ্রহ ২ হাতে পেয়ে নতুন ভাবে সত্তরের কবি সোমক-কে পড়ে ফেললাম। পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সুমুদ্রিত সংকলন সোমক দাসের এই ‘কাব্যসংগ্রহ ২’।
তোমাকেই ভালোবাসি বেশি, হে বিধ্বস্ত মহিষাসুর।
দেবীমহিমার দিকে আবাল্যসংযোগ প্রথানিয়ন্ত্রিত,
তার মধ্যে রয়ে গেছে সংস্কার-অভিশাপ, আবর্জনা।
আরতি-উচ্ছ্বাস জানি ত্রিনয়ন আবিষ্কার লক্ষ ক’রে –
( হে মহিষাসুর /কেশরে কে রেখেছিল হাত ১৯৮৯)
এই যে বিপরীত দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা, দেবীকে নয় অসুরের প্রতি মুগ্ধতা; জয়ী নয় পরাজিতের জন্য কবির বেদনা আমাদের উপনিবেশোত্তর কবিতাবিশ্বের সামনে আরেকবার দাঁড় করিয়ে দেয়। ক্ষমতাকেন্দ্র ও পরিধির বিন্যাসকে বদলে দেওয়ার এই সূচনা আমরা প্রথম প্রত্যক্ষ করেছিলাম ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’। কিন্তু দশক বিচারে সত্তরের কবি সোমক দাস (১৯৫৩-২০২২) লিরিক কবিতার ভিতরে সেই প্রকাশ ঘটালেন হিন্দু ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণের চেষ্টায় নাকি নতুন কিছু বলার জন্য? এই কবিতার পরেই একটি ভাষ্য জুড়ে দিয়ে সোমক বোঝাতে চান তাঁর কবিতা লেখার কারণ : ‘সব অশুভের মধ্যে যেন একটা ছদ্মবেশী শুভবোধ আছে, যেমন সব অন্ধকারের মধ্যে থাকে একরকমের অভাব আলো...আরাধনার চেয়ে সম্ভবত দ্বন্দ্বযুদ্ধেই মজা বেশি।’ তাহলে সোমক চান শুভ-অশুভের দ্বান্দ্বিকতার মধ্যে জীবনের পূর্ণাঙ্গ চেহারাটা দেখে নিতে। আর তাই আশ্রয় নিতে চান কবিতার কাছে, যে কবিতার সংজ্ঞায়ন ঘটান এইভাবে ‘ক- জীবনের কী,কেন,কোথায়,কখন,কেমন এইসব প্রশ্নের উত্তর, প্রতিভাস যখন বি- অর্থাৎ বিশেষভাবে, তা- মানে তান আর তাল নিয়ে ধরা পড়ে’; ঈষৎ জীবনানন্দীয় ভঙ্গিতে রমণী নয়, বন্ধু নয়, জীবন নয় শান্তি চান কবিতার কাছে। সত্তরের উত্তাল সময়ে রচনা করেন ‘পরিত্রাণ বর্ণমালা’। সমাজ আর ব্যক্তির দ্বান্দ্বিকতায় তাঁর কবিতায় প্রশ্ন আর বিদ্রূপ ধ্বনিত হয় :
কেশরে কে রেখেছিল হাত
তার বাড়ি নেই? আলমারি নেই?
পুত্রশোক প্রতিহিংসাময়
উৎপাদন ছুঁয়ে আছে ক্ষয়
তবু কেউ পুঁতে রাখে শিশু
অসঙ্গত উদ্ধার বিক্ষোভে
সমস্তই সম্মানের লোভে
হেসে ফেলে অমার্জিত পশু। (প্রেমিক /ঐ)
পৌরুষ ও রাজকীয়তার চিহ্ন সিংহের কেশর, কবির ব্যঙ্গোক্তি ও সমাজের হৃদয়হীন ছবি এখানে ধরা পড়ে। তিনি দেখেছেন, মানুষের ভালবাসা পুতিগন্ধময়, তাই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন :
মানুষের কারুকার্য তোমাতে থামেনি;
সে আরও অল্প বেশি স্বার্থপর, ছিদ্রান্বেষণশিল্প
হয়তো তোমার কাছেই শিখে গেছে তারা, মানুষেরা...
মানুষের রূপকথা শেষ হলে জেগে ওঠে রূপের ঈশ্বর (পরিত্রাণ বর্ণমালা ৬/ঐ)
সোমক দাসের কবিতায় পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল খুঁজে পেয়েছেন ‘কিছুটা বিরক্ত করা এবং অনেক বেশি আস্থা জাগানো এক আস্তিক বন্ধু’-কে। এই আস্তিক্যবোধের তাড়নাতেই হয়তো তাঁর কবিতায় ঈশ্বর ফিরে ফিরে আসেন। তৎকালীন পুলিশের অত্যাচারের স্মৃতিকে মনে রেখে বলেন :
বাকি কথা জেনেছে পুলিশ
যে আমাকে ধরে ফেলবে ঈশ্বরেরও আগে
হাতে ঘটি নিয়ে বৈতরণীর দিকে চলে যাব, তারপর? (পুলিশ, আমাকে ধরো /ঐ)
কিন্তু এই ‘ঈশ্বর’ আসলে তাঁর ভারতীয় সংস্কার আর অস্তিত্বের এক দোসর, কোনো দূরবাসী মরীচিকা নন। আর তাই ইয়েট্সের ‘দি সেকেন্ড কামিং’ কবিতার ‘The falcon cannot hear the falconer’ পংক্তির ফ্যালকন প্রতীকটি তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত হয়। ঈশ্বর তথা শুভবোধ থেকে আধুনিক মানুষের বিচ্যুতি এখানে ইয়েট্সের প্রতিপাদ্য ছিল। সোমকের ‘ফ্যালকন সিরিজের ভূমিকা’-য় পাই হতাশা আর বেদনার প্রতিভাস। যেখানে কুরুক্ষেত্রের ছবি আজও অম্লান, ‘চারিদিকে/ অ্যাটিলা অ্যাটিলা’ তবু অভ্যাসের গ্লানি মেনে নিয়ে ‘খরা ও বন্যায় আজও একই গতিপথে নতমুখ হয়ে বেঁচে আছি’। ‘শরীর ও শূন্যতার হাত পা’ কবিতা গুলিতেও সময়ের উত্তাপ আর নৈরাজ্য। কোনো পুনরাবির্ভাবের আশ্বাস কি কবি দেন আমাদের?
দিতে পারেন না বলেই পরবর্তী কাব্যে লেখেন ‘বিফল কাগজপত্র আঁকড়ে থাকি পরিত্যক্ত বিধবার মতো’ ( লেখক / ধ্বংসের প্রক্রিয়া ১৯৯৩)। কবির চোখে স্বার্থ ও সন্দেহের ছবি জেগে থাকে, বলেন ‘বন্ধু বা শত্রু নয়, চিনে নাও চক্রান্তকারীকে’ (চিনে নাও)। এই কাব্যে সচেতন সামাজিক সোমকের সমাজবীক্ষা ধরা পড়ে ‘নক্ষত্রের নাচ’ শীর্ষক সংলাপিকায়, ‘মানুষ ভুলেছে তার মানুষ নামের পরিচয়’। এই স্বধর্মচ্যুত মানুষের কাছ থেকে নতমুখে ঈশ্বরচেতনা ফিরে যায়,তবু সোমক উজ্জীবনের স্বপ্ন দেখেন। একজীবন খুব কমসময় জেনেও বলেন :
দগ্ধতায় হারিয়েছিল চেতনা উদ্ভাস
বাকি জীবন আগুনে নয় আলোয় যাবো
পুড়ে যাওয়াই শেষ কথা নয় এখন জানি
এখন ধ্যানের গভীর থেকে তোমায় পাবো... (উজ্জীবন)
এই উজ্জীবন কার জন্য ঈশ্বর না প্রেম? ‘অলসপরজ’(১৯৯৪) কাব্যের সূচনায় কবির প্রার্থনা ‘ঈশ্বর কবিতা দাও, একদিন তোমাকেও হয়তো পেরিয়ে যেতে পারি’। কবিই তো পারেন একটি পৃথিবী নষ্ট হয়ে গেলে আরেক পৃথিবীর দিকে যেতে, বাস্তবে নাই হোক, কবিতায় দ্বিতীয় ভুবনের স্বপ্নরচনা করেন। ধর্মহীন নতুন ঈশ্বরের ছবি আমাদের দেখান কবি, ভিড় বাসে পকেটমারের মত নিঃশব্দে নেমে যাওয়া ভালোবাসার জন্য আক্ষেপ নয়, বিদ্রূপ ছূঁড়ে দেন। ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাওয়ার এই প্রচেষ্টা রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার এক অনিবার্য প্রবণতা, সোমকও তার ব্যতিক্রম নন বলেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন :
ঈশ্বর, আমি তোর কাঁধে হাত রেখে বলবো। আমিও মাতাল
চেয়ে দেখ আমার ঠোঁটের পাশে লালা, তুই
কি সর্বত্র জিতে যাবি! (নিঃস্ব)
কিন্তু দেবতা হওয়ার লোভে শয়তানের মতো বেঁচে থাকতে হয়। তিনি জানেন না ‘মানুষ না হয়ে কেন মানুষেরা অযথা ঈশ্বর হতে চায়...’( প্রভাব / অভিলাষ ছাপ্পান্নভোজী ১৯৯৬)। একাকিত্ব থেকে জন্ম নেওয়া কবিতায় ‘ঈশ্বর থাকে অল্প অদূরে’। মহাভারতীয়
মিথ তাঁর কবিতায় পুনরুজ্জীবিত হয় বারবার, সময়ের আঁচে ‘হাড়ের ভিতরে চিতা জ্বলে’(হৃদয়দ্রৌপদী)। ভালবাসা চেয়ে পাওয়া যায় যৌনতা, কলঙ্কিত হতে হতে তবু কবিতায় বাঁচা, অমরত্ব খোঁজা : ‘ঢেউ ভেঙে আছড়ে পড়া ক্ষণিক ফেনার মত আমরাও ভেঙে ভেঙে বাঁচি...’ (অভিলাষ ছাপ্পান্নভোজী)। এই কবিতাসংগ্রহের শেষ কাব্য ‘প্যারিস ডায়েরি’(১৯৯৯) স্বভাবতই দিনলিপিধর্মী কবিতা। কবিতা উৎসবের স্মৃতি ও প্যারিস ভ্রমণ কবিতায়, গদ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তবু ওরই মধ্যে স্বীকারোক্তি ও যুগসচেতন কিছু উচ্চারণ উৎকীর্ণ রয়েছে :
১) কবিতা লেখার অজুহাতে অনেক লাম্পট্য করা হল।
যাবতীয় শয়তানি ঢেকে রাখা হল সব যৎসামান্য
কাব্যময় চতুরালি দিয়ে... (প্যারিস ডায়েরি ৯)
২) ঈশ্বরহীন এই শ্রমসর্বস্বতা কোন্ স্বর্গে নিয়ে যেতে পারে?
অক্টোপাস খেয়ে তুমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেবে কোন সুখ! (প্যারিস ডায়েরি ১২)
চিত্রকল্প আর প্রতীক নির্মাণে সোমক দাস আগাগোড়াই সচেতন। তাঁর মূল প্রবণতা গদ্যরীতির কবিতা, তবে অল্প কিছু চেনা পদ্যরীতির কবিতাও রয়েছে। একমাত্রা কম রেখে দলবৃত্তের ব্যবহার করেছেন ‘কুপ্রস্তাব’ কবিতায়
যদি কেঊ হাততালি দেয়
তাকে তো বলতে পারি
তাহলে তুমিই রাধা
এসো এক সঙ্গে নাচি।
এছাড়াও রয়েছে মিশ্রবৃত্তের ব্যবহার : ‘হল না। এভাবে নয়; অন্য ভাবে এসো / সহজে পেয়েছি বলে অবহেলা ভরে...’(এভাবে)।
‘কবিতা ও জীবন একই জিনিসেরই দুই রকম উৎসারণ’ - বলেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। উত্তরজাতক সোমক দাসের উপর এই পূর্বজ কবির প্রত্যক্ষ প্রভাব মোটেই দুর্লক্ষ নয়। সোমকের কবিতার ‘ঈশ্বর’ আধ্যাত্মিকতার উদ্ভাসন নয়, বরং এক নষ্ট-সময়ের প্রতীকী দ্রষ্টা শুধু। তিনি দেখেন, কবি তাঁর চোখে চোখ রাখেন, অনুভব করেন ‘জীবনের চেয়ে বড় আর কোনো কবিতা হয় না’ (লক্ষ্য করো)। এই সিদ্ধান্তে স্থিত হন :
...তুলে নাও স্বপ্নের গাণ্ডীব,দৃঢ় মন, অক্ষয় তূণীরসম্ভার।
আলোচনা অবান্তর, সমালোচনাও শুধু শ্রমক্ষয়, দীর্ণ অপলাপ
আর নয়, পরমপুরুষ চায় বিবেচনা, স্থির শ্রম, চায় না সন্তাপ। ( অপ্রাকৃতিক)
ঋণস্বীকার :
কাব্যসংগ্রহ ২ / সোমক দাস / সপ্তর্ষি প্রকাশন, ২০০৪
গ্রহণের অন্তরীণ আলো / ঐ / ডানা, ২০১২
কথা মৃত / ঐ / আস্পর্ধা, ২০১০
সোমক দাসের কবিতা / মডেল পাবলিশিং হাউস, ১৯৯৭
চিত্রঋণ : কবির আলোকচিত্রটি কথাসাহিত্যক অমর মিত্রের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত এবং বইয়ের ছবিগুলি ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেওয়া।