নাইসা
নাইসা আমাকে বলল, তুমি জানো, আমার নাম নাইসা কে রেখেছে এবং কেন রেখেছে?
আমি অজ্ঞতা প্রকাশ করে বললাম, না রে, তোর নামকরণের সময় আমি হাজির থাকতে পারিনি, আর পরেও তেমন কোনো উৎসাহবোধ করিনি। তা প্রসঙ্গটা যখন এসেই গেল, তখন তোর নামকরণের ইতিহাসটা বলেই ফেল!
আমার কথায় নাইসা হাসল, মজা করে বলল, আমার নাম রেখেছে আমার বর।
-সে কী! তোর জন্মের সময় তোর বর প্রেজেন্ট ছিল?
-ছিল তো! আমার বর আমার থেকে চারবছরের বড়। ওর নাম নাইস। দেখতে খুব সুন্দর তো, তাই তার নাম নাইস। জন্মের পর আমাকে দেখে নাইস আমার প্রেমে পড়ে গেছিল। বলেছিল, বড় হলে আমাকেই বিয়ে করবে, আর নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিল নাইসা। বুঝলে?
না বুঝে উপায় নেই। ইদানীং মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়েই যে ছেলে মেয়েরা প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, এটাও না মেনে উপায় নেই। এরপর হয়তো মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তাদের প্রেমের শুরুয়াৎ হবে! নাইসাকে বললাম, তা নাইসের সঙ্গে আমার আলাপ করাবি না? নাইসের সঙ্গে আমার কবে দেখা হবে?
নাইসা দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলল, আমার সাথেই যে কত কতদিন দেখা হয়নি!
-মানে? দেখা হয়নি কেন? কোথায় থাকে নাইস?
-নাইস তো অস্ট্রেলিয়ায় থাকে। আমার যখন মাত্র দেড়বছর বয়স, তখনই ওরা চলে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ওখানেই থাকে।
-তাহলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ আছে কেমন করে?
-নেই তো! যোগাযোগ তো নেই!
-তাহলে তুই কোন আশায় বসে আছিস যে নাইস তোকে বিয়ে করবে? নাইস তোর বর হবে?
-বিয়ে কেন হবে না?
-কী করে হবে? কোনো যোগাযোগই তো নেই!
-তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা তো ইচ্ছে করলেই যোগাযোগ করতে পারি। ফোনে কথা বলতে পারি। ভিডিও কলে কথা বলা ও দেখা দুটোই একসঙ্গে হতে পারে। মেল আই ডি তে মেসেজ পাঠাতে পারি। হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করতে পারি। ফেসবুক আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার তো কোনো কমতি নেই! কিন্তু আমরা কিছুই করি না। এমন কি আমরা কেউ কারও ছবিও দেখি না। আমাদের দুজনের দেখা হবে একেবারে বিয়ের ছাদনাতলায় শুভদৃষ্টির সময়।
আশ্চর্য! খুবই আশ্চর্য! আমার বাপের জন্মে এমন প্রেমকাহিনী আমি শুনিনি। কিন্তু নাইসার কথা আমি ফেলতে পারি না। নাইসা আমার বন্ধুর মেয়ে। ভালো মেয়ে। সম্প্রতি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কমপিউটার সায়েন্স নিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। দু’বছর পর কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। নাইসা দেখতেও বেশ সুশ্রী। নাইসা নামটা ওর শরীরের সঙ্গে মানিয়ে যায় পুরোপুরি। কিন্তু উত্তর আধুনিক যুগের একটি সুস্থ সাবলীল মেয়ে যে তার নেহাৎ বাচ্চা বয়সের নিছক বাচ্চামিকে এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে বুকের মধ্যে সযত্নে বয়ে বেড়াচ্ছে, তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। পাগলামিও বলা যায়।
নাইসকে আমি কখনও দেখিনি, যদিও নাইসের বা্বাও আমার বন্ধু ছিল। আগামী অক্টোবরে কোম্পানির কাজে অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে। নাইসের সঙ্গেও আশাকরি দেখা হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন